বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি

হত্যার পূর্বে ধর্ষণ করা হয় মা এবং ২ মেয়েকে

প্রভাতী ডেস্ক : দোতলার সেই বাড়ি, সেই বেলকনি, খাট-সোফা, চেয়ার টেবিল, থরে থরে সাজানো বই-পুস্তক কিংবা চারপাশের নিদারুণ নিস্তব্ধতা- সব কিছুই আছে আগের মতো। শুধু নেই স্মৃতি ফাতেমা আর তার ৩ সন্তান। তারা এখন পাশাপাশি পরপারে বসবাস করতেছেন। তালাবদ্ধ বাড়িটির দিকে তাকালেই কান্নায় ভেসে ওঠে মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের সাজানো গোছানো ছোট্ট সেই সুখী সংসারের জীবন যাপনের দৃশ্য।

এ বাড়ির দোতলায় শোবার ঘরে ঢুকে গত বুধবার(২২ এপ্রিল) রাতে দুর্বৃত্তরা মা ও দুই মেয়েকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করে। একইসাথে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুটিকেও জবাই করে হত্যা করা হয়। ৩ নারীর শরীরে ধর্ষণের আলামত পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার এসআই এখলাস ফরাজী।

চারপাশের আতঙ্কিত মানুষগুলোও বাড়িটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, আফসোস করছেন। ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমা ও তার ৩ সন্তানকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটনে হন্যে হয়ে ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ এখনও অন্ধকারে। এ হত্যা রহস্যের কোনো কূলকিনারাও করতে পারেনি। এদিকে তিন সন্তানকে নিয়ে পাশাপাশি কবরে ঘুমিয়ে আছেন স্মৃতি ফাতেমা।

গতকাল শনিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার কলেজ রোডের সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশ এলাকা সুনসান নীরব। বাড়ির দোতলার বেলকনির পশ্চিম দিকে ঝুলছে সাদা কালো লাল নীল রঙের জামাকাপড়, হয়তো এগুলো শুকানোর জন্য রোদে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার তিন দিন পরও কাপড়গুলো সেখানেই আছে। তদন্তের প্রয়োজনে বাড়িটি তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যেই পুলিশ এ বাড়িতে আসছে তদন্ত কাজে।

স্মৃতির বাসগৃহ

বৃহস্পতিবার(২৩ এপ্রিল) রাতে পুলিশ ৪জনের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামে পাশাপাশি মা ও তার ৩ সন্তানকে দাফন করা হয়। প্রবাসী কাজলের ইচ্ছা অনুযায়ীই তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

গত তিন দিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। তবে রহস্যজনক এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে কাজ করছে। শিগগির রহস্য উদঘাটন হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রেজোয়ান হোসেন কাজল দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী। সেখানেই ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসী স্মৃতি ফাতেমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে কাজল ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করে সংসার গড়েন। সাবরিনা সুলতানা নুরা (১৫), নাওরিন হাওয়া (১২) ও ফাদিল নামে (৮) তিন সন্তানের জন্ম হয় তাদের সংসারে। বড় মেয়ে কলেজে ও ছোট মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করছিল। ছোট ছেলেটা জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে জৈনা বাজার এলাকায় এক খণ্ড জমি কেনেন কাজল। পরবর্তী সময় সেখানে বাড়ি তৈরি করে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে কাজল মালয়েশিয়ায় চলে যান। স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা সংসার সামলানোর পাশাপাশি তিন সন্তানকে লালন-পালন করছিলেন।

একসঙ্গে ৪ জনকে হত্যার পর কাজলের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন। কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি করেন।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জেলা পুলিশের একাধিক টিম এ হত্যা রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে। তা ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন বিশেষ ইউনিটের দক্ষ ও অভিজ্ঞ সদস্যরাও কাজ করছেন। জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, খুব শিগগির এ ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print