Search

বুধবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বুধবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বুধবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

সিইউজে এবং সিটিআরএন বিবৃতি প্রদান করেন

চট্টগ্রামে ২ সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলা, ডিসির প্রত্যাহার দাবী

জিইসি এলাকায় কনসার্ট ঘিরে সংঘর্ষ-ভাঙচুরের সংবাদ সংগ্রহে এই ঘটনা ঘটে

চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যমুনা টিভির স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত ও ক্যামেরাপার্সন আসাদুজ্জামান লিমনের ওপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন  পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলামের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ( সিইউজে )।

রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে নগরীর খুলশী থানায় সংবাদ সংগ্রহের সময় চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের ডিসি আমিরুল ইসলাম থানার একটি কক্ষে সাংবাদিক জোবায়েদকে আটকে রেখে নির্মমভাবে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করা হয়। হামলায় তার চোখ, মুখ ও কানে গুরুতর আঘাত লাগে।

তৎক্ষনাৎ সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণ ঘৃণ্য, নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। এটি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে, যা সার্বজনিন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

বিবৃতিতে অবিলম্বে হামলাকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান লিমন ও জোবায়েদ ইবনে শাহাদাতের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে বিবৃতিতে।

সিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের মূলে থাকে পুলিশ। সেই পুলিশেরই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের সাংবাদিকদের উপর হামলে পড়ার ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এই ঘটনায় যদি দৃষ্টান্তমূলকভাবে বিচার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ আরও সংকুচিত হবে। সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা বলতে আর কিছুই থাকবেনা। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এই ঘটনার বিচার হতে হবে। অন্যথায় সিইউজেসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিক সমাজ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে।

এদিকে দুই সাংবাদিকের ওপর ডিসির হামলার প্রতিবাদে খুলশী থানার সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সর্বস্তরের সাংবাদিকরা।

সমাবেশে অবিলম্বে ডিসিকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে আইনি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তাঁরা।

এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ, যুগ্ন সম্পাদক ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার ও চট্টগ্রাম টিভি রিপোর্টাস নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক হোসাইন জিয়াদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক লতিফা আনসারি রুনা, সিইউজের টিভি ইউনিটের প্রধান তৌহিদুল আলম, চট্টগ্রাম টিভি রিপোর্টাস নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব একে আজাদ, চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক আশরাফুল আলম মামুন, যমুনা টিভির ব্যুরো প্রধান জামশেদ রেহমান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ব্যুরো প্রধান আলমগীর সবুজ, স্টার টিভির ব্যুরো প্রধান এমদাদুল হক ও জাগো নিউজের ব্যুরো প্রধান ইকবাল হোসেন।

সিটিআরএন-এর নিন্দা, উদ্বেগ

চট্টগ্রামে যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক ও সিটিআরএন এর সদস্য জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত খুলশি থানায় সংবাদ সংগ্রহে গেলে তার ওপর সিএমপির উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম কর্তৃক অশালীন আচরণ ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম টেলিভিশন রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (সিটিআরএন)।

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, দায়িত্ব পালনরত একজন সাংবাদিকের সঙ্গে পুলিশের এমন আচরণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক নিরাপত্তার প্রতি চরম হুমকি। সাংবাদিকরা সমাজের চোখ ও কান—তাদের ওপর এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাংবাদিক জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। অথচ তাকে থানার ভিতরে নিয়ে গিয়ে অপমান ও মারধর করা হয়েছে। যা পেশাগত মর্যাদার চরম অবমাননা। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিএমপির উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সিটিআরএন জানায়, যদি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন সিটিআরএন আহবায়ক হোসাইন জিয়াদ, যুগ্ম আহবায়ক এ কে আজাদ, নির্বাহী সদস্য আরিচ আহমদ শাহ, ফখরুল ইসলাম, সৈয়দ তাম্মিম মাহমুদ, ফেরদৌস লিপি ও শহিদুল সুমন।

প্রতিবাদ মানববন্ধন, শাস্তি দাবি 

যমুনা টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত ও ভিডিও জার্নালিস্ট আসাদুজ্জামান লিমনের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় নগরের কাজির দেউড়ি মোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা অংশ নেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এ ধরনের হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।

তারা বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা সবসময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তাদের ওপর হামলা দেশের সংবিধান ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

বক্তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দেন, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ আরও কঠোর আন্দোলনে নামবে।

সমাবেশে সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনামুল হায়দার, আবু আজাদ, রনি দত্ত, কামরুজ্জামান রনি, মোহাম্মদ নাজিম, ইফতেখার নুর তিশন, শাহ আবদুল্লাহ রাহাত, শাহরুখ সায়েল, রবিউল রবি, সিরাত মঞ্জুর, জুলকারনাইন সাদমান, সারজিল আহমেদ, দেবাশীষ চক্রবর্তী, আরাফাত কাদের, মোহাম্মদ রাকিব, জিন্নাত আইয়ুব, পরিতোষ বড়ুয়া, আবদুর রহমান ইমন, আবুল হাসনাত মিনহাজ, কাইমুল ইসলাম ছোটন প্রমূখ, ফাহাদ ইবনে মাহমুদ প্রমূখ।

এর আগে, চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় কনসার্ট ঘিরে সংঘর্ষ-ভাঙচুরের সংবাদ সংগ্রহে আজ সকালে খুলশী থানায় যান জোবায়েদ। এসময় এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। কিন্তু থানার কর্মকর্তারা এ কাজে বাধা দেন। এসময় জোবায়েদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। এরই জেরে জোবায়েদ ও ক্যামেরাপার্সন আসাদুজ্জামান লিমনকে থানার সেকেন্ড অফিসারের রুমে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করেন নগর পুলিশের উত্তর বিভাগের ডিসি আমিরুল ইসলাম।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print