
প্রভাতী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোও দায়ী। এছাড়া মিয়ানমারও কিছুতেই নিতে চায় না তাদের। বিদেশ সফর নিয়ে রবিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
১১ দিনের ত্রিদেশীয় সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, জুলাইয়ে চীন সফরে যাচ্ছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা আলাদাভাবে ভারত, চীন ও জাপানের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব দেশ মেনে নেয় যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু সমস্যা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা হলো, যেসব সংস্থা আছে, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা; তারা কখনই চায় না রিফিউজিরা নিজ দেশে ফিরে যাক। আর মুশকিল হয়েছে মিয়ানমারকে নিয়ে, তারা কিছুতেই এদের নিতে চায় না।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চুক্তি করলাম, তালিকা করলাম। এরপরই তারা আন্দোলন করল যে, তারা যাবে না। এই আন্দোলনের উসকানিটা তাহলে কারা দিল?’ তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা সমস্যা হলো, রোহিঙ্গারা মনে করে, তারা সেখানে গেলে তাদের ওপর আবারও অত্যাচার-নির্যাতন হবে। আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু মিয়ানমার গিয়েছিলেন। তিনি সব এলাকা ঘুরেও দেখে এসেছেন,পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো কখনই চায় না যে, রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। তাদের ধারণা, এই যে বিশাল অঙ্কের টাকা-পয়সা আসে, অনেকের চাকরি-বাকরি আছে; রোহিঙ্গারা চলে গেলে তাদের অনেকেরই চাকরি থাকবে না। না হলে কেন এ রকম হবে?’
ওয়াজ মাহফিলে নারী বিদ্বেষী প্রচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীরা যত বেশি শিক্ষিত হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, সেটাই হবে জবাব। আমার নারী পাইলট আছে, আমার নারী অফিসার-মেজর জেনারেল আছে, আমার নারীদের তো সব জায়গায় নিয়ে এসেছি। এটা কি জবাব না?’ জীবন্ত একটা ট্যান্ট হয়ে ঘুরে বেড়ানো।’
‘মুসলিম কান্ট্রির মধ্যেই খুনোখুনি হচ্ছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মঘাতী হচ্ছি। লাভবান কে হচ্ছে? যারা অস্ত্র বানাচ্ছে, তারা। যারা অস্ত্র দিচ্ছে, তারা। ওআইসিকে বলেছি, মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। এটা ওআইসিকে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে আমার বাবাও মাথা নত করেননি, আমিও করব না। যা সত্য, তা-ই বলে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ খুন করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। একসময় ধারণা করা হতো, কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রদেরও হঠাৎ মনে হলো, বেহেশতে যেতে হবে, মানুষ খুন করতে হবে। কোথায় লেখা আছে মানুষ খুন করলে বেহেশতে পাঠানো হবে? কেউ কি মানুষ খুন করে বেহেশতে পৌঁছে মেসেজ দিয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘ওআইসি সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্যে অনেক কিছু ছিল না। আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও অনেক কথা বলেছি। আমি বলেছি, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি কোনো দ্বন্দ্ব থাকে, কেন আমরা আলোচনা করে এসবের সমাধান করতে পারছি না? ওআইসির এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমাদের সমস্যাগুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি, তাহলে আত্মঘাতী সংঘাত আর রক্তপাত হয় না।’
বিমানের পাইলটের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হয়তো পাসপোর্ট (নেওয়া) ভুলে যেতে পারে, পাসপোর্ট নিতে ভোলা কোনো ব্যাপার না। এখানে ইমিগ্রেশনে যারা ছিল, তাদের তো এই নজরটা থাকতে হবে। তারা কেন সেটি চেক করেনি, দেখেনি?’ তিনি বলেন, ‘আগে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনোমতে একটা ব্যবস্থা ছিল। আমরা বারবার ব্যবস্থা নিচ্ছি, চেক করছি। এজন্য অনেকের পছন্দ হবে না। কারণ আগে যেগুলো করতে পারত, এখন পারছে না। আমরা ঠাট্টা করে তো বলি স্বর্ণ প্রসবিনী বিমান। খালি আমরা গোল্ড পাই, আমাদের রিজার্ভ বাড়ে, খুব ভালো কথা। সেগুলো বন্ধ করার জন্য যে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি, এই সিকিউরিটির ওপরে ব্রিটিশরা বাধা দিল, একবার অস্ট্রেলিয়া বাধা দিল। এসব ঘটনা তারা ঘটাতে পারেন, যারা বিমানকে নিয়ে খেলছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিমানটাকে নিয়ে যারা খেলত, তাদের হয়তো আঁতে একটু ঘা লেগেছে। এখানে কারা কারা কীভাবে চাকরি পেয়েছিল, সেগুলো আপনারা ভালো করে জানেন। আমি বলেছি সব খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতগুলো বিমান আমরা কিনে দিলাম, এত সুন্দরভাবে চলছে, আমাদের বাঙালি যে যেখানে আছেন, নিজের দেশের ক্যারিয়ারে চড়ার জন্য পাগল তারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘টিকিট নিয়ে ঝামেলা ছিল; টিকিট নাই অথচ সিট খালি। এখন আর সিট খালি থাকে না। যারা সিটের ব্যবসা করত, তাদেরও তো একটা ক্ষোভ-রাগ-দুঃখ আছে। আমার কাছে শত শত মেইল যাচ্ছে যে, আপনি বিমানে আসবেন না। আমি বলেছি, বিমানে আসব না মানে? যা হওয়ার হোক, মরলে নিজের প্লেনে তো মরব। নিজের প্লেনে মরলে তো নিজের মাটিতে মরব।’
এক পত্রিকার সম্পাদক সম্প্রতি জার্মানি গিয়ে দেশে নিজের মতো করে লিখতে পারছেন না বলে যে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি চাপ থাকত তাহলে উনি কি জার্মানি গিয়ে এই কথাটাই বলার সাহস পেতেন?’ আমার প্রশ্নটা এখানে। কেউ তো চাপ দেয়নি।’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের মিডিয়া ফোরামের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম নিজের কাজ ও দেশের পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ত্রিদেশীয় সফরের শুরুতে গত ২৮ মে জাপানের রাজধানী টোকিওতে যান। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) নামের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩১ মে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে পবিত্র মক্কা নগরীতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ১৪তম সম্মেলনে যোগ দেন। সৌদি সফরকালে তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালনসহ মদিনায় মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করেন।
সৌদি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গত ৩ জুন ফিনল্যান্ডে যান। সেখানে অবস্থানকালে গত ৪ জুন তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ৫ জুন অল ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ ও ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন তিনি।