প্রভাতী ডেস্ক: সাহসী কলম সৈনিক প্রবীন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ আর নেই। ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ১০টা ০৫ মিনিটের দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার বড় মেয়ে ডাক্তার হুমায়রা মেঘলা। গত ২ এপ্রিল নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ৬৯ বছর বয়সী মাহফুজ উল্লাহকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১০ এপ্রিল তাকে ব্যাংককে নিয়ে সেখানকার বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। হৃদরোগের পাশাপাশি কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপ জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন দেশের প্রথিতযশা এই সাংবাদিক।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মরদেহ শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে দেশে পৌঁছেছে।
মরহুমের বড় মেয়ে মুসাররাত হুমায়রা মেঘলার বরাত দিয়ে বিএনপির চেয়ারপাসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, মাহফুজের মরদেহ বাহী থাই এয়ারওয়েজের বিমানটি রাত ১২টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে। আগামীকাল রবিবার দুপুরে জানাজা শেষে তার মরদেহ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এর শনিবার আগে রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, তার প্রথম নামাজে জানাজা রবিবার জোহরের নামাজের পর গ্রীন রোড ডরমিটরি মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আসরের নামাজের পর জাতীয় প্রেস ক্লাবে। এরপর মরহুমের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। শায়রুল জানান, বিষয়টি তদারকি করছেন মরহুমের বড় ভাই ডক্টর মাহবুব উল্লাহ। তিনি বিএনপি’র মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন।
প্রবীন এই সাংবাদিক বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের থিংক ট্যাংকের অন্যতম একজন ছিলেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করতেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্র অবস্থায় সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। ১৯৭২ সাল থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ও ১৯৭৪ সালে সাংবাদিকতায় পুনরায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসেও কাজ করেন। এছাড়া তিনি ঢাকা এবং ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশে তিনিই সর্বপ্রথম পরিবেশ সাংবাদিকতা শুরু করেন।
২০১৮ এর নভেম্বরে মাহফুজ উল্লাহ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবনীগ্রন্থ লেখেন, যার নাম ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ হার স্টোরি’। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী, যাদুর লাউ, যে কথা বলতে চাই, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন: গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১), উলফা অ্যান্ড দ্য ইনসারজেন্সি ইন আসাম।
১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দেশের এই খ্যাতিমান সাংবাদিক।