নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২০ নভেম্বর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ফাতেমা ইসমা বোরকা পরে ক্লাসে আসলে অশ্লীল মন্তব্য করে তাকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দেয়নি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম। পরদিন ২১ নভেম্বর ছাত্রীর মা নূপুর বেগম বোরকা পরার অনুমতির জন্য গেলে প্রধান শিক্ষক মারমুখী আচরণ ও বেশ্যা-পতিতা বলে গালি গালাজ করে তাকেও বের দেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত ২১শে নভেম্বর বিকাল ৩টায় এ ঘটনা ঘটলেও ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিষয়টি গড়ায় পতেঙ্গা থানায়। এই দিন ছাত্রীর মা ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
ছাত্রীর মা নূপুর বেগম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. আলীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অশালীন আচরণের অভিযোগ আনেন।
অন্যদিকে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. আলী ছাত্রীর মা এবং তার সহযোগী বখাটের অনধিকার প্রবেশ, শিক্ষককে মারধর ও রক্তাক্ত করার অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপল বড়ুয়া।
ওসি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে অভিভাবক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের দায়ের করা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তদন্ত করছি আমরা। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছাত্রীর মা নূপুর বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে সাদিয়া ফাতেমা ইসমা গত ২০শে নভেম্বর বোরকা পরে বিদ্যালয়ে যায়। ওইদিন তাকে যৌন হয়রানিমূলক নানা প্রশ্ন ও বাজে মন্তব্য করে বিদ্যালয়ের ক্লাসে প্রবেশ করতে দেয়নি প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম। পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে বোরকা পরার অনুমতি চাইলে তিনি আলোচনা করে দেখতে হবে বলেন।
পরদিন গেলে প্রধান শিক্ষক বলেন গতকাল আসছেন, আজকে আবার কেন আসছেন? এর উত্তর দেয়ার আগেই উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন। সকাল ৯টার দিকে আমরা বিদ্যালয়ে পৌঁছি। প্রধান শিক্ষক অফিসে আসার পর আমরা অনুমতি সাপেক্ষে কক্ষে প্রবেশ করি। তখন বোরকার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি গালিগালাজ করেন। আমি ভিডিও করছি দেখে বিদ্যালয়ের দপ্তরি, শিক্ষক ও ম্যাডামরা এসে আমার মোবাইল কেড়ে নেন। এর মধ্যে আমি ভিডিওটি অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিই। তারা নিজ হাতে আমার মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলেট করে দেন। তারপর তারা আমাদের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেন। এমনকি প্রধান শিক্ষক আমাদের জঙ্গি, বেশ্যা-পতিতা বলেও মন্তব্য করেন। বারবার গায়ে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসেন। ‘
প্রতিবেশী কলি বলেন, প্রধান শিক্ষক শুধু আমাদের সঙ্গে নয় পূর্বেও অনেক অভিভাবকের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অভিযোগ করলেও আমলে নেন না। তাই দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই শিক্ষক।
সামাজিক সংগঠন পতেঙ্গা ইয়াংস্টার ক্লাবের সভাপতি জোবাইর বলেন, ‘মেয়েটি বোরকা পরে স্কুলে যেত। মাঝে মাঝে প্রধান শিক্ষক আপত্তি করায় স্কুল গেট পর্যন্ত বোরকা পরত, তারপর ক্লাস শেষ করে আবার স্কুল গেটে এসে বোরকা পরে বাড়ি ফিরত। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়। একদিন মেয়েটি পরিবারে বিষয়টি জানালে তার মা অনুমতির জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে যান। তখন প্রধান শিক্ষক বোরকা যারা পরে তারা বেশ্যা ও পতিতাবৃত্তি করে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও প্রচণ্ড বাজে ব্যবহার করে তাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় দিন আবারো প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি আবারো খারাপ ব্যবহার করেন।
জোবাইর বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে ঘটনাটি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে জানাই। সাংবাদিকরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে তাদের নাজেহাল করে আটকে রাখেন প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আলী। বেশ কয়েকটি নাম্বার থেকে ফোন আসার পর আমি স্কুলে যাই। আমি যাওয়ার পর সাংবাদিক ও অভিভাবকদের বের করে আনি। যার জন্য আমার বিরুদ্ধে অবৈধ প্রবেশ দেখিয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলা করা হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. আলী বলেন, এক বখাটে আমাদের বিদ্যালয়ে অনধিকার প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষককে রক্তাক্ত করেছে। তাই আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। অভিভাবককে অশ্লীল গালাগালি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে প্রধান শিক্ষককে উত্তেজিত করে ভিডিওটি করেছে, যাতে বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করা যায়।’