চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডস্থ হাজীগাঁওয়ে এক প্রবাসীর জমি দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ২ মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। এসময় হামলাকারীরা বাড়ীতে ঢুকে নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ও মামলাসূত্রে জানা জানা যায়, পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের হাজীগাঁও আবু তাহের জিহাদীর বাড়ীর প্রবাসী নাছির উদ্দীন গং এর সাথে পার্শ্ববর্তী আহম্মদ হোসেন গং এর জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসতেছে। উক্ত বিরোধের জেরে উভয়ের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়াঝাঁটি বিরাজমান। প্রশাসন উভয় পক্ষকে বারবার সতর্ক করার পরেও আহম্মেদ হোসেন গং প্রতিপক্ষের উপর প্রায় সময় চড়াও হয়। গত রবিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে আহমদ হোসেন গং বিরোধীয় জমিতে টয়লেট নির্মাণের জন্য দা, লোহার রড, লাঠি, কোদালসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে আসলে বাড়ীতে কোন পুরুষ না থাকায় ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন সিদ্দিকা এবং প্রবাসী নাছির উদ্দীনের স্ত্রী সৈয়দা শাহনাজ পারভিন বাঁধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলাকারীরা দা এবং লাঠিসোটা নিয়ে তাড়া করলে তারা বাড়ীর ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এসময় হামলাকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে ফ্রিজ, আলমিরা, চেয়ার- টেবিলসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং আলমিরায় থাকা নগদ ২ লক্ষ টাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে। তারা সেলিম উদ্দীনের সদ্য প্রসূতি স্ত্রীর উপর মারাত্মক নির্যাতন চালায়। তার বাম চোখের উপর কোপ মেরে গুরুতর কাটা জখম করে। পেটে হামলাকারীদের উপুর্যুপুরী লাথি মারার কারণে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হয়। এসময় তারা শারমিনের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইনসহ লক্ষাধিক টাকার গয়না ছিনিয়ে নেয়। পরে প্রতিবেশীরা শারমিন এবং শাহনাজকে উদ্ধার করে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে শাহনাজকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন এবং শারমিনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরদিন সোমবার (২৯ এপ্রিল) সৈয়দা শাহনাজ পারভিন বাদী হয়ে সাইফুল আজম হাদী, মোরশেদুল আলম, আহম্মদ হোসেন এবং আশফাকুল আজম হাদীকে আসামী করে ১৪৮, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৩৫৪, ৩৮০, ৪২৭, ৫০৬(২) ধারায় বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং-৩৭/১৪৫। উল্লেখ্য আসামি মোরশেদুল আলম
সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়াসহ ফৌজদারী একাধিক মামলার আসামি বলে জানা যায়।
মামলার বাদী সৈয়দা শাহনাজ পারভিন বলেন, আহম্মেদ হোসেন গং এর সাথে বিরোধীয় ৩গন্ডা জায়গা (বিএস ৩১৬ নং খতিয়ানের ১৮৭৪ ও ২৩১৯ নং দাগ) আমার শ্বশুর মৃত মো: হাশেম আহম্মেদ হোসেনের নানী মৃত সোনা জানের নিকট থেকে ০৭/০৩/১৯৫৫ ইং তারিখে ৫৪২ নং কবলামূলে খরিদ করেন। উক্ত জায়গা আমরা ভোগ দখলে ছিলাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে আসামিরা উক্ত জমি দখলের পাঁয়তারা করতেছে। বাড়ীতে কোন পুরুষ না থাকায় এর আগেও তারা আমাদের উপর বেশ কয়েকবার হামলা করেছে। বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করলে তিনি সার্ভেয়ার নিয়োগ করে পরিমাপ করে আমাদের পক্ষে সালিশি রোয়েদাদ প্রদান করেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ এই রোয়েদাদের তোয়াক্কা না করে দখল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রশাসনের কাছে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদ বলেন, মহিলাদের উপর হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা নিয়ে সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করে সাইফুল আজম হাদী, মোরশেদুল আলম এবং আহম্মদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হবে, অপর আসামি আশফাককে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।