চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ে ভবন মালিক কর্তৃক গার্মেন্ট লুটপাটের অভিযোগ এনে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রামের আলোচিত নারী উদ্যোক্তা ছবি সিকদার। শুক্রবার (২৬শে এপ্রিল) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সেন্স ফ্যাশন লিঃ এর স্বত্বাধিকারী ছবি সিকদার বলেন, পারিবারিক দারিদ্রতার কারণে বেশী লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে একটা কর্মের সন্ধানে চট্টগ্রাম শহরে আসেন। একটি গার্মেন্টসে অপারেটর পদের একটি চাকরী নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে সেখানে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে সেখান থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ২০১৮ সালে চাক্তাই চাউল পট্টির রাবেয়া টাওয়ারের ২য় তলার ফ্লোর ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে মাত্র ১৮-২০ টি মেশিন নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে ২০২০ সালে ব্যাংক ও ব্যক্তিগত ঋণের মাধ্যমে ১২০ টি মেশিনসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেন। ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ায় ফ্লোর মালিক বজলের মাথায় খারাপ চিন্তার উদয় হলে তিনি দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন অন্যথায় ফ্লোর ছাড়ার নির্দেশ দেন। ছবি সিকদার মালিকের বেআইনী নির্দেশের তোয়াক্কা না করায় মালিক তার অনুগত সহযোগী স্থানীয় সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং লিডার তানজির, জামাল এবং রাশেদসহ বিভিন্ন ক্যাডার দিয়ে ফ্লোর ছাড়তে হুমকী দেওয়া শুরু করে। এরপরেও ফ্লোর না ছাড়ায় মালিকপক্ষ এক রাতে তালা কেটে নিজেদের তালা লাগিয়ে দেয়। পরে বিষয়টি কাউন্সিলর লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী সমাধান করে ৬ মাসের সময় নিয়ে দিবে বলে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে ৩টি খালি প্যাডে স্বাক্ষর নেন। এরপরে ২০২৩ সালের ১৯শে অক্টোবর তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় রাতে মালিকের সন্ত্রাসী বাহিনী সব জিনিস লুটপাট করে নিয়ে যায়। যেখানে ১৩০টি মেশিন, ৫০০ পিস রেডি জ্যাকেট, ১৫ রোল জ্যাকেটের কাপড়, বয়লার, জেনারেটরসহ বিভিন্ন এক্সেসরিজ ছিলো বলে জানান। যেসবের মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এছাড়া অফিসে চেকবই, বিভিন্ন কাজে রাখা খালি স্ট্যাম্প ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিলো।
পরে তিনি জানতে পারেন, মালিকের স্ত্রী ইসমত আরার সাথে তার ৬০ হাজার টাকায় ফ্লোর ভাড়ার চুক্তিপত্র হয়েছে। তখন তিনি নিশ্চিত হন যে, তার অফিসে থাকা সেই খালি স্ট্যাম্প দিয়ে এই চুক্তিপত্র করা হয়েছে। তার চেকবই থেকে চেক নিয়েও হয়তো তারা ইচ্ছেমতো টাকার অংক বসিয়ে কোন চক্রান্ত করতেছে মর্মে সন্দেহ পোষণ করতেছেন।
এই বিষয়টি মহিলা কাউন্সিলর সমাধানের কথা বলে আজকাল করে সময় ক্ষেপণ করে, বাকলিয়া থানায় মামলা করতে গেলেও অজানা কারণে পুলিশ মামলা না নিয়ে কাউন্সিলরের সহযোগিতায় সমঝোতার পরামর্শ দেন। সর্বশেষ কাউন্সিলর বেবী বলতেছেন মালিক বজল তার কাছ থেকে ভাড়া বাবদ ২৫ লাখ টাকা পাবে সেগুলো পরিশোধ করলে ৭২ টি মেশিন দিয়ে দিবে। তাদের এমন নির্যাতনে এখন তিনি খুবই অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করতেছেন। একদিকে ব্যাংক লোন পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে বায়ারের মালামালের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে মামলার হুমকি। এছাড়া বেকারত্বের কারণে হতাশা দ্বিগুণ হচ্ছে এই উদীয়মান নারী উদ্যোক্তার। উল্লেখ্য যে, একজন সাধারণ শ্রমিক থেকে অসীম সাহস নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ায় বিভিন্ন পুরুষ্কার প্রাপ্ত হন তিনি। যার সংবাদ প্রথম শ্রেণির গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপানো হয়েছিলো।
এমতাবস্থায় এই সন্ত্রাসী ভবন মালিকের কবল থেকে তার মেশিন-সরঞ্জাম উদ্ধারের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর বেগম লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী বলেন, আমার হেফাজতে শুধু ৭০টি মেশিন আছে। মালিক ভাড়া বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা পাবে। ৫ লক্ষ টাকা মাফ করে ২০ লক্ষ টাকা দিলে সেই মেশিনগুলো দেওয়া হবে। মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় ২৫ লক্ষ টাকা কেমনে বকেয়া হয়, কয় বছরে হয় সেই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি তিনি।