Search

বৃহস্পতিবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

যেমন আছেন সেই কিশোরী বধূ নছিমন

প্রভাতী ডেস্ক : কেমন আছেন বাউফলের সেই কিশোরী বধূ নাজমিন আক্তার ওরফে নছিমন? সোমবার(২৮ জুন) সকালে সরেজমিন নছিমনকে দেখতে কনকদিয়া ইউনিয়নের কুম্বুখালি পলাশের বাড়িতে যাওয়া হয়। পলাশ নছিমনের কিশোর স্বামী রমজানের মামাতো ভাই।

শনিবার রাতে চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পর নছিমন পলাশের জিম্মায় তার বাড়িতেই আছেন। কিশোর রমজানও আছেন ওই বাড়িতে।

নছিমন জানান, ঘটনার পর থেকে মিডিয়া কর্মীসহ নানা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না। তার কিশোর স্বামী রমজানেরও একই অবস্থা। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে নছিমনের বিয়ের পর সে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। একদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

নছিমন আরো জানান, তার কিশোর স্বামী রমজান তাকে চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না। সামান্য কষ্ট পেলে নিজের উপর অত্যাচার করেন। ব্লেড দিয়ে হাত ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে রক্তাক্ত করেন। তাই সার্বক্ষণিক তার কাছেই থাকতে হয়। তার ধারণা শাহিন চেয়ারম্যানের মতো কেউ আবার তাকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাবে নছিমন বলেন, ২৩ জুন রমজান ও আমি পালিয়ে রমজানের মামা বাড়ি যাই। সেখানে গিয়ে আমরা প্রথম বিয়ে করি। তারপরেও রোববার সকালে আবু সাদেক নামের এক কাজী এসে পুনরায় তাদেরকে বিয়ে পড়িয়েছেন। এই আবু সাদেক চেয়ারম্যান শাহিনের সঙ্গেও তার বিয়ে পড়িয়েছিলেন।

এদিকে রমজানের মামাতো ভাই পলাশ জানান, শনিবার রাতে চেয়ারম্যান শাহিনের সঙ্গে নছিমনের বিয়ে বিচ্ছেদের পর নছিমনকে তার জিম্মায় দেয়া হয়।  ওই সময় চেয়ারম্যান শাহিন তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখেন। সেই থেকে নছিমন তার বাড়িতে আছেন। এ নিয়ে নানা ধরণের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাকে।

তার ফুফাতো ভাই রমজানের সঙ্গে নছিমনের বিয়ে প্রসঙ্গে বলেন, যেই কাজী (প্রধান কাজী মাওলানা মো. আইয়ুবের সহকারী আবু সাদেক) চেয়ারম্যানের সঙ্গে নছিমনের বিয়ে পড়িয়েছেন, সেই কাজী রোববার সকালে তার বাড়ি এসে ওদের (রমজান ও নছিমন) বিয়ে পরিয়েছেন। কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

কিন্তু কাজীর সহকারী আবু সাদেক কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কেবল ওদের বিয়ে পড়িয়েছি।’

এ ব্যাপারে কাজী মাওলানা মো. আইয়ুব বলেন, আমি কোনো বিয়েই পড়াইনি। আমার বাবা অসুস্থ। ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনার সময় আমি ঢাকা ছিলাম। যেহেতু চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আমার অফিস, সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান আমার সহকারীকে (আবু সাদেক) প্রভাবিত করে বা ভয় দেখিয়ে কোনো কিছু করতে পারেন। এ দায় আমার না। কাবিননামায় কিংবা তালাকনামার কোনোটিতে আমার স্বাক্ষর নেই।

অপরদিকে এ ঘটনার পর সোমবার সকালে নির্যাতনের শিকার প্রেমিক যুবক রমজান হাওলাদারের বড় ভাই হাফেজ মো. আল ইমরান বাদী হয়ে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেনের আদালতে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় কাজী আইয়ুবকে ৭ নম্বর তার সহকারী আবু সাদেককে ৬ নম্বর আসামি এবং নছিমনের আশ্রয়কারী (জিম্মাদার রমজানের মামাতো ভাই) পলাশকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা পিবিআই প্রধানকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করেছেন ওই প্রতিবেদনে চেয়ারম্যান শাহিনের বিরুদ্ধে বাল্য বিবাহ নিরোধ আই ২০১৭ এবং ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ৩৪ ধারায় ৪ (ঘ) উপধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন।

ইউএনও জাকির হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করলেও প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করেছেন তা বলতে রাজি হননি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print