শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে রজব ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যরাতে বাঁশখালীর চাম্বলে প্রবাসীর বাড়ীতে হামলা – লুটপাট !

লুটপাট করার সময় ভাংচুর করা হয় আসবাবপত্র

বাঁশখালী প্রতিনিধি : করোনা সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত সময় কাটানোর সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কতিপয় সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ এবং ভূমিদস্যুরা। ৭ই এপ্রিল মধ্যরাতে এমনই একটি সুযোগ সন্ধানী ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী চক্র কর্তৃক চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পূর্ব চাম্বল এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের মৌলানা আব্দুল মালেকের বাড়ীতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ীর ভেতরে প্রায় সব রুমের জিনিসপত্র এলোমেলো এবং আসবাবপত্র ও আলমিরা ভাংচুর করা। বাড়ীর লোকজনকে ভীত অবস্থায় দেখা যায়।

প্রবাসী হোছাইন আহমদের স্ত্রী রোকসানা হক বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা রাত আনুমানিক ১.৩০ টার দিকে গেইটে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। এসময় তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং তারা পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই ৮-৯ জন সন্ত্রাসী ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে যায়। ৪-৫ জন সন্ত্রাসীর মুখ বাঁধা ছিল। অন্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে সন্ত্রাসী কালু এবং রহিমকে চেনা গেলেও অন্যদেরকে চেনা যায়নি। ভেতরে ঢুকার পর একজন মুখবাঁধা সন্ত্রাসী বন্ধুক এবং সন্ত্রাসী কালু ধারালো কিরিচ দেখিয়ে বলে যে কেউ আওয়াজ করলে জানে মেরে ফেলা হবে। এরপর তারা আলমিরা এবং জিনিসপত্র ভাঙ্গতে থাকে। আমার দেবর শাহাদাত থানায় জানালে পুলিশ আসার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে দেখি আলমিরায় থাকা আমার এবং আমার জা এর ২.৫ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৩৫ হাজার টাকা, আমার দেবরের একটি নতুন স্যামসাং মোবাইল এবং আরো ১৫-২০ হাজার টাকার জিনিস লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।’

সন্ত্রাসীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ীর গেইট

প্রবাসী হোছাইন আহমদের ছোট ভাই শাহাদাত হোছাইন জানান, প্রায় ৩ বছর আগে মৃত নূরুল ইসলামের পুত্র সন্ত্রাসী জামাল উদ্দীন প্রকাশ কালুর ফুফুদের নিকট থেকে সাড়ে ৩ গন্ডা জমি ক্রয় করেন আমার ভাই মৌলানা হোছাইন আহমদ। উক্ত জমি ক্রয়ের পর থেকে সন্ত্রাসী কালু আমার ভাই হোছাইনের নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে আসতেছিল। কালু বলেছিল তাকে চাঁদার টাকা না দিলে উক্ত জায়গা আমাদেরকে ভোগ-দখল করতে দিবে না। এই ব্যাপারে আমার ভাই হোছাইন আহমদ স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীকে অভিযোগ করলে তিনি সরেজমিনে এসে উক্ত জায়গা পরিমাপ করে আমাদের পক্ষে মৌখিক রায় দেন এবং সন্ত্রাসী কালুকে সতর্ক করে দেন।

কিন্তু উক্ত জায়গায় কোন কাজ করতে চাইলে সন্ত্রাসী কালু বাঁধা প্রদান করেন। সেটা আবারো চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে বলে দীর্ঘসময় ক্ষেপণ করেন। এমতাবস্থায় বিগত ১৫-১৬ দিন আগে সন্ত্রাসী কালু এবং একই এলাকার মৃত নজির আহমদের ছেলে সন্ত্রাসী আব্দুর রহিমকে সাথে নিয়ে এসে আমাকে বলে যে,তাকে তার দাবীকৃত ১ লক্ষ টাকা না দিলে সে উক্ত জায়গা দখল করে সেখানে গৃহ নির্মান করবে। হুমকি দেওয়ার ২ দিন পর সন্ত্রাসী কালু উক্ত জায়গায় গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করলে আমি বাঁশখালী থানায় অভিযোগ প্রদান করি। বাঁশখালী থানার এস.আই জলিল সরেজমিনে এসে সন্ত্রাসী কালুকে গৃহ নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বলে চলে যান। কিন্তু সন্ত্রাসী কালু পুলিশের নিষেধ অমান্য করে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে এবং ১টি গৃহও নির্মাণ করে। গতকাল ৭ই এপ্রিল আরো ১টি গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করলে বিকাল ৫টার দিকে আমি বাধা দিই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কালু হুমকি দিয়ে বলে যে, আজ রাতে মজা বুঝব। এটার জের ধরে তারা এই হামলা এবং লুটপাট করেছে।

রান্নাঘরের জিনিসপত্রও ভাংচুর করে সন্ত্রাসীরা

ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমাদের এলাকা খুবই শান্ত এলাকা। এই এলাকায় এই ধরণের ঘটনা ঘটতেছে না অনেকদিন ধরে। মাঝরাতে হঠাৎ এই বাড়ীর লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আমরা বের হই। কিন্তু সন্ত্রাসীরা এত বেপরোয়া ছিল যে,আমরা কেউ এগিয়ে আসার সাহস পাইনি।

এলাকাবাসী জানায়, মৌলানা আব্দুল মালেক একজন অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক। তাঁর ৩ সন্তানের মধ্যে ২ সন্তান সৌদি প্রবাসী এবং ১ সন্তান বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা যিনি বাঁশখালী শাখায় কর্মরত। তাঁদের পরিবার খুবই শান্তশিষ্ট, এলাকায় কারো সাথে তাঁদের কোন ঝামেলা নাই। সৌদি প্রবাসী মৌলানা হোছাইন আহমদ এলাকার মানুষের কাছে দানবীর হিসাবেও পরিচিত। সন্ত্রাসী কালু মৌলানা হোছাইনের নিকট দীর্ঘদিন যাবত চাঁদা দাবি করে আসতেছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছিল। কিন্তু গভীর রাতে বাড়ীতে ঢুকে ডাকাতি করার সাহস করবে সেটা কখনো ভাবিনি। আমরা এইসব সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনার ব্যপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, পূর্ব চাম্বলের একটি বাড়ীতে রাতে লুটপাট করার খবর আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে, কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print