রবিবার, ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি

বিবাহিত জীবনে নারীদের চাইতে পুরুষেরা বেশী নির্যাতিত !

বিবাহিত জীবনে যে শুধু নারীই নির্যাতিত হন তা নয়। পুরুষেরাও নির্যাতিত হন। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কথাটা বলছি। প্রশ্নটা হলো কিভাবে? অধিকাংশ মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকদের দেখতে পারেনা, তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে চান না আর করলেও দায় সারা ভাব থাকে। তাদের পিছনে টাকা খরচ করা নিশ্চিত অপচয় বলে মনে করে।

ফলে বাধ্য হয়েই স্বামীরা গোপনে বাড়িতে টাকা পাঠায়। সেটা যদি কোনভাবে বউ জানে শুরু হয় অশান্তি। এর ভেতরে স্বামীর প্রাক্তন প্রেমের ইতিহাস জানলেতো কথাই নেই। এই অশান্তি আগ্নেয়গিরির লাভা হয়ে যাবে। বেচারা স্বামী যতই তার প্রাক্তনকে ভুলে থাকুক বউ তা কিছুতেই ভুলে থাকতে দিবেনা। উঠতে বসতে, কারণে অকারণে খোঁটা দেবে।

সন্দেহপ্রবণ কিছু মেয়ে আছে। এরা স্বামীর টয়লেটে বেশি সময় লাগলে কান পেতে থাকে, হিসু করার নামে ভেতরে গিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে কিনা মোবাইল ফোন সুযোগ পেলেই ঘাটে, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ঘাটে। কোন মেয়ের নাম পেলেই সে মনগড়া ভাবে মেয়েটিকে স্বামীর প্রেমিকা বানিয়ে দেয়, বাস্তবে হোক সেটা আশি বছরের বৃদ্ধাশ্রমে থাকা কোন মহিলার নাম। শুরু হয় গোয়েন্দাগিরি, স্বামী বেচারা যতোই তাকে ভালোবাসুক, কেয়ার করুক ভদ্রমহিলা নিজেকে দুনিয়ার সবচাইতে অবহেলিত বউ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করে। সংসারে জ্বালার শুরু এখান থেকেই…

কেউ আছে তার স্বামীকে নিজের মত করে পেতে চায়। তারা লুতুপুতু হয়ে স্বামীর কাছে হাস্যকর আবদার তুলে ধরে বলে, “আজ থেকে তোমার সকল ব্যক্তিগত বিষয় আমাকে বলবা” কথা হলো ব্যক্তিগত বিষয় কিভাবে ব্যক্তি নিজে ছাড়া অন্যে জানে?স্বামী বেচারা বউয়ের আবদার পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খায়। নিজের পছন্দের কাজ বউয়ের অপছন্দ, মতের গুরুত্বহীনতা, পছন্দের অমিল। বউয়ের মন রক্ষা করতে গিয়ে স্বামীর নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি। শুরু হয় স্বামীর ট্রমা..বিষণ্ণতা। “কি ছিলাম আর কি হয়ে যাচ্ছি?”

আল্লাহর দুনিয়ায় ড্রামাবাজ কিছু মেয়ে আছে। এরা নিজের কাজ হাসিলে সেই লেভেলের ড্রামা করতে পারে। যেমন- কোন কারণে ঝগড়া হলেই সে স্বামীকে আত্মহত্যার হুমকি দেয়, কথা বলেনা, আলাদা ঘরে ঘুমায়, খেতে চায়না, রাগ করে বাপের বাড়ী ও যায়, বাচ্চাদের সাথে রাগারাগি করে, ওদের মারে। তাদের অযৌক্তিক, আহ্লাদী উদ্দেশ্য হাসিলে নানারকম প্রতিরক্ষামূলক কৌশল বা Defense Mechanism ব্যবহার করে অভিযোজন করে। তবে স্বামীর উপর রাগ করে বাচ্চাকে মারা তীব্র মনোকষ্টের প্রকাশ। এটাকে বলে Displacement.

নোংরা স্বভাবের কিছু মেয়ে আছে । এরা কোনকিছু গুছিয়ে রাখেনা। পুরো বাড়ীর জিনিসপত্র এলোমেলো পড়ে থাকে। দামী দামী ফার্নিচারের উপরে এক ইঞ্চি করে ধূলার স্তর। বাথরুম, কিচেনসহ পুরো বাড়ী নোংরা হয়ে থাকে। বাচ্চার হিসুর গন্ধে পুরো ঘর “হিসু হিসু ঘন্ধে ভরে থাকে নিজে পরিস্কার করেনা, কাজের লোককে দিয়েও করায়না। স্বামী নিজে মাঝে মাঝে করে বা কাজের লোককে দিয়ে করায়। এই নিয়ে রোজ অশান্তি। তুলনাবাজ কিছু মেয়ে আছে। অমুকে তার বউয়ের জন্য এইটা করে, তমুকের বউ এতো দামের শাড়ি কিনছে, তালতো বোনের খালতো ভাইয়ের ফুপাতো বোনের বর শশুড় বাড়িতে ট্রাক ভরে বাজার পাঠাইছে। তুমি কি করছো আমার জন্য? স্বামীর আয়ের দিকে তার কোন নজর নাই। প্রতি মাসে তার শাড়ী কেনা চাইই চাই। বেচারা স্বামী…বউরে কিছুতেই বুঝাইতে পারেনা।

স্বাধীনচেতা কিছু মেয়ে আছে। এরা হচ্ছে “তুমি তোমার মত, আমি আমার মত” টাইপ। এদের সাথে স্বামী চাইলেও তার সমস্যা, কষ্ট, আনন্দ প্রাণ খুলে শেয়ার করতে পারেনা। কোন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলা যায়না। স্বামীর কিছুতেই তার কোন আগ্রহ নেই। তার সব আগ্রহ আত্মকেন্দ্রিক। স্বামীর কোন কিছুই তাকে টানেনা। সংসারের বিষয়ে উদাসীন। কোন কিছু করতে চায়না, এমন কি রান্নাও না।  অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমায়। সব কিছু কাজের মেয়ের উপর ফেলে রাখে। নিজের বাচ্চাকেও ঠিকমত খাওয়ায় না, ছেলেমেয়েকে পড়াতেও চায়না। সংসার চলে কাজের মেয়ে দিয়ে। কিন্তু কাজের মেয়েও টিকেনা তার দূর্ব্যবহারের কারণে।

এখন আবার ফেসবুকের যুগ। বউয়ের দাবী, স্বামীর কোন মেয়ে ভক্ত থাকা যাবেনা। তাদের সাথে চ্যাট করা যাবেনা। কোন মেয়ে তার কিছুতে লাইক বা কমেন্ট করলে তা নিয়ে অশান্তি। তার পাসওয়ার্ড হ্যাক করে সে ওসব ভক্তদের গালি দেয়। অথচ নিজে পরকীয়া করে যাচ্ছে দিনের পর, স্বামী বেচারা বড়ই শান্তশিষ্ট। বুক ফাটেতো মুখ ফুটেনা। (সব ছেলে বাঘা তেতুল হয়না) বিষয়টা হল, মেয়েরা কোন কিছু করার জন্য স্বামীকে বলতে বা চাপ দিতে পারে কিংবা মানসিক টর্চার করতে পারে, গায়ে হাত তুলতে বা মারতে পারেনা। রাগারাগি, কান্নাকাটি, মন খারাপ করতে পারে বড়জোর। তাই এগুলোকে ‘নির্যাতন’ বলে ধরা হয়না।

আমাদের সমাজ গায়ে কয়টা দাগ পড়েছে তা দিয়ে নির্যাতন হিসাব করে। আর এইখানেই পুরুষেরা বউ পিটিয়ে নির্যাতক হিসেবে ধরা খেয়ে যায়। এই সুযোগে তীব্র মাত্রায় মানসিক নির্যাতক নারীগুলো একটা পুরুষের জীবনকে অশান্তিতে ভরিয়ে দেয়। অথচ মানসিক জ্বালা কিন্তু শরীরের জ্বালার চাইতেও তীব্র। এই দুনিয়ায় যত আত্মহত্যা ঘটে তাতো “মনের জ্বালাতেই ঘটে”। পরিশেষে বলবো সমঝোতা করে চলুন, যেটার জন্য অশান্তি বা ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে সেটা পরিহার করুন।

লেখক- শাহেদ আরেফিন, ঢাবি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print