প্রভাতী ডেস্ক : ঘটনাটি ঘটেছে ওই প্রদেশের বারেইলি জেলায়। সেখানে মাটির পাত্রে রেখে জীবন্ত কবর দেয়া হয় কন্যা শিশুটিকে। গত অক্টোবর মাসে কবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো তাকে। ওই শিশুটি এখন পুরোপুরি সুস্থ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সে সময় গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। তখন তার রক্তে দূষণ এবং বিপদজনক মাত্রার প্লাটিলেট কাউন্ট ছিলো। তবে এখন তার ওজন বেড়েছে, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট স্বাভাবিক হয়েছে। এমনই তথ্য জানিয়েছেন শিশুটির চিকিৎসক রাভি খান্না।
এখনো তার বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তাকে দত্তক দেয়া হবে। এখন সে উত্তর প্রদেশের বারেইলি জেলার শিশু কল্যাণ দপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
অনেকটা আকস্মিকভাবে ওই শিশুটিকে একজন গ্রামবাসী খুঁজে পান, যিনি তার সদ্য মারা যাওয়া নবজাতক শিশুকে দাফন করতে কবর খুঁড়ছিলেন।
ওই গ্রামবাসী জানিয়েছিলেন, তিনি যখন প্রায় ৩ ফুট গর্ত খুঁড়েছিলেন, তখন তার শাবলটি একটি মাটির পাত্রে আঘাত করে এবং সেটা ভেঙ্গে যায়। তখন তিনি একটি শিশুর কান্না শুনতে পান। তখন তিনি পাত্রটি বাইরে বের করে আনেন এবং তার ভেতরে ওই শিশুকে দেখতে পান। এরপর প্রথমে ওই শিশুটিকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ২দিন পরে তাকে ডা. খান্না’র শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুটির অপরিণত অবস্থায় জন্ম হয়েছে, সম্ভবত তার বয়স ছিল ৩০ সপ্তাহ। যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তার ওজন ছিলো মাত্র ১১০০গ্রাম। তখন তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, তার রক্তশূন্যতা রয়েছে। এছাড়া তার ঠাণ্ডা এবং হাইপোর (রক্তে চিনি শূন্যতা) সমস্যা রয়েছে।
ডা. খান্না বলেন, গত ৩রা ডিসেম্বর যখন তাকে আমরা জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করি, তখন তার ওজন বেড়েছে ২.৫৭ কেজি। সে এখন বোতল থেকে দুধ খেতে পারছে এবং পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছে।
ডা. রাভী খান্না আরো বলেন, শিশুটি কতক্ষণ ধরে কবর দেয়া অবস্থায় ছিল, সেটি জানা যায়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তারা শুধু ধারণা করতে পারেন যে, শিশুটি কীভাবে টিকে ছিলো। তিনি বলেছেন, তাকে হয়তো ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে কবর দেয়া হয়েছিলো এবং সে নিজের শরীরের বাদামী চর্বির ওপরেই নির্ভর করে টিকে ছিলো। তলপেটে, উরু এবং গালে এ ধরণের চর্বি নিয়ে শিশুদের জন্ম হয়। জরুরি পরিস্থিতিতে এর ওপর নির্ভর করে শিশুরা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
তবে অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকে হয়তো ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে কবর দেয়া হয়েছিলো এবং উদ্ধার করা না হলে সে হয়তো আর ১ বা ২ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারতো। মাটির পাত্রে থাকা ফুটোর কারণে হয়তো সেখানে বাতাস চলাচল করেছে। ফলে সে অক্সিজেন পেয়েছে। অথবা নরম মাটির ভেতর থেকেও সে অক্সিজেন পেয়ে থাকতে পারে।
গত অক্টোবরে ‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ এবং নবজাতকটির বাবা-মায়ের সন্ধান করতে শুরু করে। পুলিশ বলেছে, তাদের বিশ্বাস শিশুটিকে কবর দেয়ার সঙ্গে তার বাবা-মা জড়িত আছে। কারণ এই ঘটনাটি এতো আলোচনার জন্ম দিলেও, কেউ শিশুটির অভিভাবকত্ব দাবি করতে এগিয়ে আসেনি।