Search

মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

অবশেষে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা!

প্রভাতী ডেস্ক: বৃহস্পতিবারে (১৪ নভেম্বর) ডাবল সেঞ্চুরি করেছে পেঁয়াজ। পাইকারী বিক্রেতারাই এ পণ্যটি ২০০ টাকার এক পয়সা কমে বিক্রি করছেন না। যা একাধিক হাত পেরিয়ে খুচরা বাজারে ২২০ ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি পেঁয়াজ। আজ শুক্রবার তা ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা।

শুক্রবার ছুটির দিনে অধিকাংশ চাকরিজীবী বাজার করে। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের মূল্য কেজি প্রতি ৩০০ টাকা, ভারতীয় ২৫০, মিশরের পেঁয়াজ ২৪০ টাকা হিসাবে বিক্রী হচ্ছে। এটা পেয়াঁজের দামের একটি বিশ্ব রেকর্ড।

ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এরপর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম বারের মতো পাইকারী বাজারে ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদনি পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০ – ৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল।

কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারো পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না- এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন, ফলে আবারো ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি।

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তৃতায় বলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরো উসকে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকের। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।

তবে এখানেই থেমে থাকেনি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা। বুধবার (১৩নভেম্বর) ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়। বৃহস্পতিবার সেই দাম আরো বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার তা আবারো বেড়ে ৩০০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনো দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।

তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটি খারাপ হবে। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

পেঁয়াজের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এক লাফে এত টাকা বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বাজারে কথা প্রচলিত রয়েছে, একই ব্যক্তি আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মুদ্রাপাচার হচ্ছে। সরকারের আর্থিক ও বাণিজ্যিক গোয়েন্দাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’
তিনি মনে করেন, এটা শুধু বাণিজ্যিক কারণ নয়; এর পেছনে অন্য কোনো ফাঁয়দা নেওয়ার অপচেষ্টা হতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম যখন কেজি প্রতি ৩০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে তখনই লন্ডনের বাজারে পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিলো প্রতি কেজি বাংলাদেশি টাকায় ৫৫ টাকা করে। আবার বড় বড় গ্রোসারি শপে ২৫ কেজি পেঁয়াজের বস্তার দাম ছিলো ৮ পাউন্ড, যা কেজি দরে হিসাব করলে ৩২ পেন্স দাম হয়। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি কেজিতে ৩৫ টাকা করে পড়ে।

ঐদিকে ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানির বার্লিন শহরেও খুবই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে। সেখানে দেখা গেছে একটি সুপার স্টোরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম মাত্র ০.৯৯ ইউরো (বাংলাদেশি ৯২.২৫ টাকা) ধরা হয়েছে। তবে তা ৫০% ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪৬ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৯ টাকা ২০ পয়সা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print