নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনায় স্ত্রী মিন্নির সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় সারাদেশ। প্রধান হত্যাকারী নয়ন বন্ড বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং অধিকাংশ আসামীই গ্রেফতার হয়েছে। এরই মধ্যে রিফাত শরীফকে নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন রিফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুরুর আলম জন। তিনি গণমাধ্যমকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্যও প্রদান করেছেন। স্ট্যাটাসের সঙ্গে রিফাতের বিভিন্ন সময়ের নানা স্মৃতিবিজড়িত ৩০টি ছবিও পোস্ট করেছেন জন।
পাঠকের জন্য মঞ্জুরুল আলম জনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
“রিফাত তোর সঙ্গে জীবনের কিছুটা সময় পথ চলতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমার জীবনে দেখা সব থেকে সেরা ভালো মনুষটি ছিলি তুই। হয়তো তোর মতো বন্ধু, সঙ্গী, সাথী, ভাই আর জীবনে পাব না। তুই আমাদের ছেড়ে অনেক অভিমান নিয়ে চলে গেলি। তোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিস। শেষ ১০ বছর হাসি ছাড়া তোকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তোর হাসিটা খুব মিস করবোরে। তুই বন্ধু ছিলি না, তুই ছিলি আত্মার ভাই। তোর সঙ্গে অনেক রাগারাগি করেছি। আর কেউ রিফাতের নামে নালিশ করতে পারবে না। আর কেউ বকা দিতে পারবে না। আর কেউ কোনোদিন সকালবেলা ঘুম থেকে ডাকতে আসবে না। আর কোনোদিন কল দিলে বলবি না, দাঁড়া বাসার সামনে পাঁচ মিনিট, আমি আসতেছি ভাইয়া।
ইচ্ছা ছিল সারাজীবন একসঙ্গে পথ চলব। কিন্তু সেটা আর হলো না। আমি জানি অনেক কষ্ট পেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন তুই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবি। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস। আল্লাহ তোকে জান্নাতবাসী করুক।”
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়নের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
একপর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিফাত মারা যান।
রিফাত শরীফকে হত্যার পরদিন ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা করেন তার বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। মামলায় পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন বন্ড (২৫)। বাকি আসামিরা হলেন মো. রিফাত ফরাজী (২৩), মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)।