রবিবার, ১১ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১১ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১১ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই জিলকদ ১৪৪৬ হিজরি

শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তার স্ত্রী ইমা বসু চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন

চট্টগ্রামে বিচারককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় পুলিশ সদস্য আটক

ইমা বসুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করার সময় বিচারক জুয়েল দেবকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন

হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটে বিচারককে গালাগাল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগে সঞ্জয় চৌধুরী ওরফে তন্ময় ওরফে আবির চৌধুরী (২৬) নামে এক পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম আদালতে একটি যৌতুকের মামলায় হাজিরা দিতে এলে তাকে আটক করা হয়। পরে অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যকে আদালতের হাজতখানায় আটক রাখা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, বিচারককে গালাগালের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলার পর তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হবে। মঙ্গলবার নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে পুনরায় আদালতে হস্তান্তর করা হবে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সঞ্জয় চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নে। তার বাবার নাম চন্দন চৌধুরী। সঞ্জয় কনস্টেবল হিসেবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কক্সবাজারে কর্মরত। গত বছরের ১৯ জুলাই যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তার স্ত্রী ইমা বসু চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী ইমা নগরের কোতোয়ালি থানার রুমঘাটা এলাকার বাসিন্দা চিরঞ্জীব বসুর একমাত্র মেয়ে।

এদিকে ইমা বসু বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলার আসামি পুলিশ কনস্টেবল সঞ্জয় চৌধুরী নানা আদেশ নিয়ে বিচারক জুয়েল দেবের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর জের ধরে ইমা বসুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করার সময় বিচারক জুয়েল দেবকে গালাগাল এবং তাকে নিয়ে নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন সঞ্জয় চৌধুরী। আদালতে এ বিষয়ে স্ক্রিনশটসহ অভিযোগ দেন ইমা বসু। এরপর আদালত অভিযোগটি তদন্ত করতে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ পেয়ে অভিযোগ তদন্ত করেন সংস্থাটির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান। তার তদন্তে উঠে আসে পুলিশ সদস্য সঞ্জয় চৌধুরীর বিচারককে গালাগালের সত্যতা। এ বিষয়ে তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ৫ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর যৌতুকের মামলায় আজ (সোমবার) বিচারক জুয়েল দেবের আদালতে হাজিরা দিতে আসেন সঞ্জয় চৌধুরী। এদিন আদালত তাকে আটক রাখার আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নিশান চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ সদস্য সঞ্জয় আদালতের হাজতখানায় আটক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা হবে। এরপর সেখানে তাকে হস্তান্তর করা হবে।

ইমা বসুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মধুসুধন দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিচারককে গালাগালের বিষয়টি আমরা আদালতকে জানিয়েছিলাম। ঘটনাটি তদন্ত করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপর আজ কনস্টেবলকে আটক করা হয়।

ইমা বসুর দায়ের করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছিল, ২০১৮ সালে ফেসবুকে ইমা বসুর সঙ্গে সঞ্জয় চৌধুরীর পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে ৩০ জুন তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সঞ্জয় তার স্ত্রীর কাছ থেকে নানা অজুহাতে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এর মধ্যেই অভিযুক্ত সঞ্জয় পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময় তিনি মোবাইলে একাধিক নারীর সঙ্গে কথা বলতেন।

২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি তাদের সংসারে জমজ ছেলে জন্মলাভ করে। এরপর সঞ্জয় ছেলেদের ও স্ত্রীর জন্য তেমন ভরণপোষণের খরচ দিতেন না। গত ১ জুন সঞ্জয় স্ত্রীকে ফোন করে নানাভাবে হুমকি দেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইমু কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে জিডির পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্জয়কে কোতোয়ালি থানায় হাজির হতে নোটিশ দেয় পুলিশ।

গত বছরের ৭ জুলাই কোতোয়ালি থানায় হাজির হয়ে সংসার করতে ইচ্ছুক বলে জানান সঞ্জয়। ওইদিন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যান তিনি। তবে সেখানে গিয়ে পুনরায় ঝগড়া করেন। এ ঘটনার দুদিন পর ৯ জুলাই স্ত্রীর কাছে ডিভোর্স নোটিশ পাঠান সঞ্জয়। এরপর গত ১৯ জুলাই আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print