রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি

যখন রিটটি করা হয় তখন শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল

মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

এসআইএফ সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা ‘আইনগত অভিভাবকের’ নাম যুক্ত করতে নির্দেশ

শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা ‘আইনগত অভিভাবকের’ নাম যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ আগস্ট) বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের ১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার।

এ রায়ের ফলে ৩ জনের যেকোনো একজনের নাম দিয়ে ফরম পূরণ করা যাবে। সব ফরম সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রায়ে।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) সংশোধনের মাধ্যমে ‘বাবা’ অথবা ‘মা’ অথবা ‘আইনগত অভিভাবকের’ নাম যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।

ফলে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক—এই তিন বিকল্পের যেকোনো একটি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) পর্যায়ে বাবার নাম না দিয়ে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সুযোগ নিয়ে ১৪ বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, এই রায়ের ফলে মায়ের অধিকারও আংশিক প্রতিষ্ঠিত হলো। আর মাতা-পিতার পরিচয়হীন যেকোনো শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো।

‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ শিরোনামে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ব্লাস্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালে ওই রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেওয়া হয়।

আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, এস এম রেজাউল করিম ও আইনজীবী আয়শা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

রায়ের পর আইনজীবী আয়শা আক্তার বলেন, রাজশাহী বোর্ডের অধীন এসএসসির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণে বাবার নাম দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তখন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে বাবা এবং মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। বৈষম্যমূলক এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়েছিল। অভিভাবক হিসেবে এখনো শিক্ষাক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে বাবা এবং মায়ের নাম লিখতে হয়। রায়ে হাইকোর্ট বলেন, বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সব ফরম পূরণ করা যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষা বোর্ডের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক হিসেবে যেকোনো একটি পরিচয় উল্লেখ করে ফরম পূরণ করা যাবে।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, যখন রিটটি করা হয়, তখন শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। ফরমে অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম উল্লেখ করা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান ফরমে পূরণে বাবা অথবা মায়ের নাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print