Search

মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

ঢাকায় ব্যবসায়ীকে থানায় তুলে নিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা নিলেন ওসি!

প্রভাতী ডেস্ক : রাজধানীর পুরান ঢাকার এক পরিবহন ব্যবসায়ীকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে ডেকে নেন চকবাজার থানার ওসি আবদুল কাইয়ুম। এরপর টাকার দাবিতে দুদিন আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয় ওই ব্যবসায়ীর ওপর। অস্ত্র ও মাদক মামলা দেয়ার ভয় দেখানো হয়। বাধ্য হয়ে ওসির দাবিকৃত ১৫ লাখ টাকা নিয়ে থানায় হাজির হন ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী। টাকা পেয়ে দুর্বল মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীকে কারাগারে পাঠান ওই ওসি। গত ২৬শে জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে।

ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ৫১ নম্বর লালবাগ সাফ গার্ডেনের বাসায় থাকি। গত ২৬শে জানুয়ারি মধ্যরাতে চকবাজার থানার এসআই ওয়ালিউল্লাহ পাঁচ সদস্যের একটি টিম নিয়ে সাদা পোশাকে বাসার সামনে আসেন। নিরাপত্তারক্ষী আলমগীরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশ সদস্যরা বাসায় প্রবেশ করেন। গভীর রাতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের মোটরসাইকেল করে চকবাজার থানায় যাই।

আমার সঙ্গে মোটরসাইকেলে এসআই ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন। আমার স্ত্রী সঙ্গে যেতে চাইলেও তিনি তাকে যেতে দেননি। থানায় যাওয়ার পর ওসি আমাকে বলেন, ‘তুই তো ব্যবসা করিস, তোর অনেক টাকা। তোর নামে অস্ত্র মামলা হবে।’

তিনি বলেন, ওসি আমার কাছে জানতে চান, ‘তোর নামে কি কোনো মামলা আছে?’ জবাবে বলি, ‘দুই-তিন বছর আগে আমার ট্রাক ভাড়া নিয়েছিলেন অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম মুরাদ। ওই ট্রাকে করে তার কারখানায় উৎপাদিত পলিথিন বিভিন্ন জেলায় পাঠাত। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ পলিথিনের দুটি মামলা দিয়েছিল। ট্রাকের মালিক হিসাবে আমাকেও আসামি করে। আমি জানতাম না, ট্রাকে কী নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।’ এই কথা শুনে ওসি বলেন, ‘তোর ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে, না হলে ছাড়বো না। অস্ত্র, মাদক মামলা দেব।’

এদিকে স্বামী বাসায় ফিরছেন না দেখে, রাত ৩টার দিকে স্ত্রী রোকেয়া বেগম চকবাজার থানায় যান। এসময় মোক্তার তার স্ত্রীকে জানান, ওসি ৫০ লাখ টাকা চায়, তা না হলে ছাড়বেন না। পরে মোক্তারের স্ত্রীকে পলিথিন ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম মুরাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কারণ, ওসির সঙ্গে মুরাদের সুসম্পর্ক। পরদিন ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে রোকেয়া বেগম পলিথিন ব্যবসায়ী মুরাদের বাসায় যান।

ব্যবসায়ী মোক্তারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি মুরাদ ভাইয়ের বাসায় গিয়ে স্বামীকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে বলি। তিনি আমাকে কিছু বকাঝকা করার পর বলেন, আপনি বাসায় যান। জুমার নামাজের পর ওসি থানায় এলে তার সঙ্গে গিয়ে কথা বলেন। মোক্তারকে ওসি ছেড়ে দেবেন।’ মুরাদের বাসা থেকে বের হয়ে রোকেয়া ওসিকে ফোন করেন। এ সময় ওসি ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে একা থানায় যেতে বলেন। কোনো পুরুষ সঙ্গে না নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওসির নির্দেশনা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি বিকালে রোকেয়া বেগম একাই চকবাজার থানায় যান।

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ওসি আমার কাছেও ৫০ লাখ টাকা চান। আমি তাকে বললাম, এত টাকা কোথায় পাব? আমার স্বামী হাজতে। বাসায় একটি টাকাও নেই। এক পর্যায়ে ওসিকে বলি, স্যার ৫ লাখ টাকা দিবো।’ তিনি বলেন, ‘হবে না। মামলা দেব।’ এরপর আমি দশ লাখ টাকার কথা বলি। এতেও তিনি রাজি হন না। ওসি আমাকে বলেন, ‘১৫ লাখ টাকা লাগবে। আর কম হবে না।’

এরপর রোকেয়া থানা হাজতে গিয়ে তার স্বামী মোক্তারকে জানান, ওসি ১৫ লাখ টাকার কমে ছাড়বে না। এ সময় মোক্তার ব্যবসায়ী আজিজুল হক ইকবালের কাছে টাকা চান। ইকবালের বাসায় মোক্তার তার স্ত্রীকে টাকা আনার জন্য পাঠান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইকবালের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা এনে ওসির কক্ষে যান রোকেয়া বেগম। রোকেয়া বলেন, এক হাজার টাকার নোটের ১৫টি বান্ডিল ওসিকে দিই। এরপরও আমার স্বামীকে ছাড়ছিল না। কারণ জানতে চাইলে ওসি বললেন, ‘এভাবে ছাড়া যাবে না। ছোট্ট একটা মামলা দিয়ে দিই, আদালতে গেলেই জামিন হবে। পরদিন ২৮ জানুয়ারি শনিবার প্রতারণার একটি মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে। আদালতে গিয়ে আমরা উকিল ধরে জামিন নিয়ে ওই দিন বিকালে বাসায় আসি।

এ অভিযোগের বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি আবদুল কাইয়ুম জানান, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো বানোয়াট। মোক্তার একজন ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীর ট্রাকে ডিভাইস বসিয়ে মালামাল তছরুপ করেন। এই অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ মোক্তারের স্ত্রীর কাছ থেকে কত টাকা নেয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘এ বিষয়ে যদি কোনো তথ্য নিতে চান তাহলে থানায় আসেন। সরাসরি কথা বলব।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print