
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের নতুন পাকিস্তান হলেন মুসলিম লীগের নওয়াজ প্রধান শাহবাজ শরিফ। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ১৭৪ ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন তিনি। ৩৪২ আসনের পরিষদে প্রধানমন্ত্রী হতে তার দরকার ছিল ১৭২টি ভোট।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে একের পর এক অস্থিরতা পেরিয়ে সোমবার(১১ এপ্রিল) দেশের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেলেন শাহবাজ শরিফ। কিন্তু অনেকেরই হয়ত অজানা ইমরান খানকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা এই রাজনীতিকের ইতিহাস।
তিনি শুধু পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তার আরো একটি পরিচয় হল, তিনি দেশটির তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। দেশের বাইরে শাহবাজ ততটা পরিচিত না হলেও দেশের ভেতরে প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য তার সুনাম আছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিরোধী দলনেতার পদে থেকে আসা শাহবাজের এর আগে প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে। তিনবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। এ পদে সবচেয়ে বেশি দিন থাকার কৃতিত্বও তারই আছে।
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে লন্ডনে চলে যাওয়ার পরই তার দল পিএলএম-এন পরিচালনার দায়িত্ব পান শাহবাজ।
১৯৯৯ সালে জেনারেল পারফেজ মুশারফের নেতৃত্বে পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন শাহবাজ শরিফ। ২০০০ সালে সৌদি আরবে নির্বাসনে থাকতে শুরু করেন তিনি। ২০০৭ সালে শাহবাজ আবার পাকিস্তানে ফেরেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করতে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জিতে ফের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন।
সোমবার জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ১১৫টি সদস্য পদ নিয়ে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেয়। এরপর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শাহবাজ।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ইমরান খান। তার বিরুদ্ধে এই অনাস্থা প্রস্তাবও এনেছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ। দেশের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে এ প্রস্তাব আনা হয়।
এ অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এতে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়ে পাকিস্তান।
এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীরাও আদালতের শরণাপন্ন হন। টানা পাঁচদিনের শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে শনিবার অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। এত নাটকীয়তার পর ইতিহাসে প্রথম অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান।