শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

রাজবাড়ীতে বাবার লাশ রেখেই সম্পত্তি নিয়ে ৫ সন্তানের দ্বন্দ্ব

প্রভাতী ডেস্ক : বাড়ির উঠানে বাবার লাশ রেখেই সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন ৫ সন্তান। এমনকি সম্পত্তির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত লাশ দাফনেও বাধা দেন ৪ সন্তান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় মৃত্যু হলেও বুধবার (৭ জুলাই) দুপুর ১টা পর্যন্ত বাড়ির উঠানেই পড়ে থাকে লাশ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং গণ্যমান্যরা দফায় দফায় সালিশের মাধ্যমে দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর সন্তানরা লাশ দাফনের সিদ্ধান্তে উপনীত হন। কিন্তু ততক্ষণে খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি থানায় নিয়ে যায়। বৃদ্ধের সন্তানদের এমন কীর্তিতে হতবাক হয়ে গেছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পাঁচুরিয়ার অম্বলপুর গ্রামে। মৃত ব্যক্তির নাম ইয়াছিন মোল্লা (৮৫)। তার ২টি ছেলে ও ৩টি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ইয়াসিন মোল্লা ইতোপূর্বে তার বসতবাড়ি ও মাঠের জমিজমাসহ মোট ৬০ শতাংশ জমি তার ছোট ছেলের নামে লিখে দেন।

স্থানীয়রা জানান, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ইয়াছিন মোল্লার ৫ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে বাবলু মোল্লা, ফুলবড়ু বেগম, রাবেয়া বেগম ও মমতাজ বেগমের সঙ্গে ছোট ছেলে রহমান মোল্লার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের কারণে রহমান বাড়িতেও টিকতে পারেননি। তিনি গোয়ালন্দ পৌর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। এ বিরোধের জেরেই মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন না করে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হলেও স্থানীয়দের খবরে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে জিডি মূলে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী মর্গে পাঠায়।
মৃত ইয়াছিন মোল্লার বড় ছেলে বাবলু মোল্লা, মেয়ে ফুলবড়ু বেগম, রাবেয়া বেগম ও মমতাজ বেগম অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাবা ছোটভাই রহমান মোল্লার কাছে থাকেন। সেই সুযোগে সে বাবাকে ফুঁসলিয়ে তার সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছে। এ নিয়ে রাজবাড়ীর আদালতে আমরা একটা মামলাও করি। সেই মামলায় গত ৫ জুলাই আদালত বাবাকে হাজির হতে নির্দেশ দিলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।

অসুস্থতার খবরে আমরা বাবাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলেও ছোটভাই আমাদের কথা না শুনে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। আমাদের ধারণা, ছোটভাই রহমান ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবাকে মেরে ফেলেছে।

এ প্রসঙ্গে মৃত ব্যক্তির ছোট ছেলে রহমান মোল্লা বলেন, গত শুক্রবার হঠাৎ করে বাবা অসুস্থ হলে তাকে গোয়ালন্দে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে ডাক্তার দেখাই। এ সময় ডাক্তার কিছু টেস্ট ও ওষুধ লিখে দেন এবং বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে বলেন। আমি সেই অনুযায়ী বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। অসুস্থতাজনিত কারণে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আমার ভাই-বোনেরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমার বাবা সুস্থ অবস্থায়-সজ্ঞানে আমার নামে বাড়ি ও জমি লিখে দিয়ে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঘটনাস্থলে যাই। লকডাউনের পরে তাদের জমি-জমার বিষয়টির সমাধান করে দেব বলে আশ্বস্ত করি। পরে স্ট্যাম্পে ৫ ভাই-বোনের স্বাক্ষর নিয়ে মৃত ইয়াছিন মোল্লার দাফনের সিদ্ধান্ত নেই। এ সময় ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে জিডি মূলে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print