
বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লো বাকলিয়ার মাদক সম্রাজ্ঞী ও পতিতা ব্যবসায়ী মমতাজ বেগম বেবী ওরফে নাচনেওয়ালী বেবী। সোমবার (১৭ই মে) দুপুরে চকবাজার থানা পুলিশের একটি টিম রসুলবাগ এলাকার খাল পাড়স্থ আরামবাগের সবুর কলোনী থেকে আরো ৪ পতিতা ও ২ দালালসহ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল- আনোয়ারা থানার মাইজপাড়া এলাকার মৃত ইন্দু মিয়ার মেয়ে ও তফজল আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম ওরফে বেবী (৪০), বাঁশখালী থানার দক্ষিণ বুরুমছড়া এলাকার মৃত রেজাউলের স্ত্রী রুমা বেগম (২৮), বাকলিয়া থানার ওয়াইজর পাড়ার মৃত আমির হোসেনের ছেলে মো. রুবেল হোসেন (২০), একই এলাকার মো. ইয়াকুব মিয়ার ছেলে মো. লিটন মিয়া (২১), সাতকানিয়া থানার ধর্মপুর এলাকার মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রুমি আক্তার (৩০), কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানা এলাকার শিউলি আক্তার ওরফে আনু (২৩), বাকলিয়া থানার বড় মিয়া মসজিদ এলাকার জহিরের স্ত্রী জেসি আক্তার (২০)।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়ার চকবাজার থানাধীন রসুলবাগ এলাকার খাল পাড়স্থ আরামবাগের
সবুর কলোনীতে প্রায় ৩-৪ বছর ধরে মাদক ও দেহ ব্যবসা করে আসতেছে মমতাজ বেগম বেবী প্রকাশ নাচনেওয়ালী বেবী। তাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করে তার কবল থেকে এলাকার কিশোর ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর পাশাপাশি পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থও হয়েছেন এলাকাবাসী। এই ভয়ংকর মাদক ও দেহ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এলাকার সমাজসেবীরা গণস্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রসুলবাগ আবাসিক এলাকার পাশে আরামবাগ আবাসিক এলাকার সবুর কলোনীতে ভাড়া বাসায় থাকে বেবী। নিজের বসবাসের জন্য একটি ঘর ছাড়া আরো ২টি ঘর নিয়ে সেখানে ৪-৫জন মেয়ে রেখে সকল প্রকার অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যায় বেবী। সকল প্রকার মাদক তার কার কাছে পাওয়া যায়। কেউ এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে মাদক কিংবা পতিতা দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে উল্টো মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বেবী। তাই বেবীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।
এলাকার সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, এই নাচনেওয়ালী বেবীর কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকলিয়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে এমন জঘন্য অপকর্ম চলতে দেওয়া যায় না। বেবীর দালালেরা কৌশলে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে বেবির রংমহলে নিয়ে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার করে দিচ্ছে। আমি এসবের প্রতিবাদ জানানোটা আমার জন্য কাল হলো। বেবী আমার বিরুদ্ধে ৩-৪টা বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বর্তমানে তার সাথে থাকে এমন একজন পতিতাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করিয়েছে। আমার কাছে লোক মারফত বেবী খবর পাঠাচ্ছে ৭ লাখ টাকা দিলে এবং তার অবৈধ ব্যবসায় বাধা না দিলে এই মামলা নামিয়ে নিবে অন্যথায় আরো মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিবে।কিন্তু যতই মামলা হামলা হউক বেবির এই অপকর্মে আমি ছাড় দিবো না। সে যতদিন এই এলাকায় এই অবৈধ কর্মকান্ড চালাবে ততদিন আমি লড়াই করবো। তাকে আটক করে মানবপাচার মামলায় আদালতে প্রেরণ করায় চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, এই মাদক সম্রাজ্ঞী ও পতিতা ব্যবসায়ী বেবীকে পুলিশ অনেকবার আটক করেছেন। কিন্তু সে অদৃশ্য শক্তিতে বীরদর্পে থানা থেকেই বের হয়ে চলে আসে। প্রশাসনের উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, এলাকার কিছু আওয়ামী নামধারী পাতিনেতা মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে এই নাচনেওয়ালী বেবিকে তার অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা বেবীর অপকর্ম চালাতে প্রশাসনের কাছে লবিং তদবীরও করে। এই কাজে বাড়ী মালিক মো: আবদুস সবুরও জড়িত রয়েছে। তাকে বারবার অনুরোধ করার পরেও তিনি এই পতিতা ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে বের করতে কোন উদ্যোগ নেন নি। এই নীরবতাই তার জড়িত থাকার প্রমাণ। আমরা চাই না বেবী আবারো এই এলাকায় এসে দেহ ব্যবসা শুরু করুক।
এই ব্যাপারে বাড়ীর মালিক আবদুস সবুর বলেন, বেবীর এসব অপকর্মের কথা এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বলে আসতেছে। কিন্তু আমি তাকে বারবার বাসা ছাড়ার কথা বললেও সে বাসা ছাড়তো না। উল্টো আমাকে হুমকী দিত। বিষয়টি আমি সাবেক এবং বর্তমান কাউন্সিলরকেও জানিয়েছিলাম। এখন তাকে আটক করায় আমি খুব খুশি হয়েছি। প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাব, আইনগতভাবে আমার বাসাগুলো আমাকে খালি করে দিতে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: শহীদুল আলম বলেন এই মাদক সম্রাজ্ঞী ও পতিতা ব্যবসায়ী বেবীর কারণে এলাকার যুব সমাজ একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমি প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছি। আজকে পুলিশ তার আস্থানায় অভিযান চালিয়ে ৪ জন নারী এবং ২ জন পুরুষসহ তাকে আটক করেছে। সে যাতে জামিনে এসে পুনরায় এই অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হতে না পারে সেই ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন বলেন, অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকায় রসুলবাগ এলাকার খাল পাড় সবুর কলোনী থেকে বেবীসহ ৫ মহিলা এবং ২জন পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাদক সম্রাজ্ঞী ও পতিতা ব্যবসায়ী নাচনেওয়ালী মমতাজ বেগম বেবীর গ্রামের বাড়ী আনোয়ারায়। সে হাইলধর গ্রামের ইছাখালী এলাকার ইন্দু মিয়ার মেয়ে। সে ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন যাত্রাপালায় নাচতো। তাই তাকে নাচনেওয়ালী বেবী বললে সবাই চেনে। প্রায় ২০ বছর ধরে সে এই পেশায় জড়িত। বিভিন্ন যাত্রাপালায় মেয়েও সরবরাহ করে বেবি। বেবী আগে যাত্রাপালা নিয়ে কাজ করলেও ৩-৪ বছর ধরে মাদক এবং নারী ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। আনোয়ারার কয়েকজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথেও বেবীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বেবী তাদের বড় বড় চালান বহন করার পাশাপাশি নিজেও খুচরা ইয়াবা বিক্রি করে।