
যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালে সহিংস আন্দোলন দমনে চট্টগ্রামে যে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আলোচনায় ছিলেন, তাদের একজন প্রদীপ কুমার দাশ পরে কক্সবাজারে গিয়ে জলদস্যু দমনেও প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।
কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসির দায়িত্বে যাওয়ার পর ‘ইয়াবা প্রতিরোধে’ ভূমিকার জন্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদকও লাভ করেন তিনি।
এসব প্রশংসা-পদকের পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযোগে একাধিকবার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হতে হয়েছে প্রদীপকে, পড়তে হয়েছে বিভাগীয় মামলায়। তবে প্রতিবারই মুক্ত হয়ে ‘ভালো জায়গায়’ পদায়ন পেয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর সারোয়াতলীর ছেলে প্রদীপ কুমার দাশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৯৬ সালে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার থাকাকালে ২০০৪ সালে পাথরঘাটায় এক বিধবা নারীর জমি দখলের অভিযোগে তিনি বরখাস্ত হন।
এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত হয়ে তিনি কাজ শুরু করেন কক্সবাজার জেলা পুলিশে। পরে পদোন্নতি পেয়ে ২০১০-১১ সালে পতেঙ্গা থানার ওসির দায়িত্ব পান। ২০১৩-১৪ সালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জামায়াত-শিবিরের নাশকতা প্রতিরোধে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রেখে আলোচনায় আসেন প্রদীপ।
কিন্তু কিছুদিন পর নিজের আত্মীয়ের জায়গা দখলের ঘটনায় আবারো তিনি বিতর্কে জড়ান। এরপর পাঁচলাইশ থেকে সরিয়ে তাকে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি করা হয়।
২০১৫ সালে সুপার রিফাইনারি নামে একটি তেল শোধনাগারের ৯ হাজার লিটার তেল আটক করে ফের আলোচনার জন্ম দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পরে সিলেট রেঞ্জে বদলি হন প্রদীপ। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে বদলি হয়ে তিনি সিএমপির ডিবিতে যোগ দেন।
ওই বছরই পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় আবু নসুর গুন্নু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পরিদর্শক প্রদীপের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রদীপ দাশকে বদলি করা হয় কক্সবাজারে। ২০১৭ সালে উখিয়া থানার ওসির দায়িত্ব পান তিনি। পরে সেখান থেকে বদলি করা হয় মহেশখালী থানায়।
সেখানে জলদস্যু দমনে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হন প্রদীপ। মহেশখালী থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাকে টেকনাফ থানার ওসি করে পাঠানো হয়।
টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত প্রদীপ কুমার দাশকে ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বিপিএম পদকে ভূষিত করা হয়।
সর্বশেষ সিনহা হত্যা মামলায় আসামি হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর কমে গেছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনা।