Search

বৃহস্পতিবার, ২১শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ২১শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ২১শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে সফর ১৪৪৭ হিজরি

বন্টননামা দলিল ছাড়া সম্পত্তির নামজারি (মিউটেশন) বা বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে

অবশেষে পরিবর্তন হলো উত্তরাধিকার সম্পত্তির ভাগাভাগি পদ্ধতি

এই আইনে অপরাধীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে

দেশে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বা সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমা কমাতে সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, এখন থেকে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং তা বিক্রি বা নামজারি করার জন্য ‘আপোষ বন্টননামা দলিল’ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই দলিল ছাড়া সম্পত্তির নামজারি (মিউটেশন) বা বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের ঘটনা বহু পুরোনো। এই নিয়ে দেশের দেওয়ানি আদালতগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য মামলা দায়ের হয়, যার বেশিরভাগই ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত। ২০০৪ সালেই আপোষ বন্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক করা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ ছিল সীমিত। অনেকেই মৌখিকভাবে বা সাধারণ স্ট্যাম্পে চুক্তি করে জমি ভাগাভাগি করতেন, যা পরবর্তীতে ভয়াবহ আইনি জটিলতা তৈরি করত। এই সমস্যা নিরসনে এবং স্বচ্ছতা আনতে সরকার নতুন এই কঠোর বিধান কার্যকর করেছে।

নতুন আইন অনুযায়ী যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো হলো:

১. বাধ্যতামূলক বন্টননামা দলিল: উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগ করতে হলে এখন থেকে অবশ্যই রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সকল শরিকের উপস্থিতিতে ‘আপোষ বন্টননামা দলিল’ রেজিস্ট্রি করতে হবে।

২. মৌখিক বন্টন বাতিল: এখন থেকে কোনো ধরনের মৌখিক ভাগ-বণ্টন আইনত গ্রহণযোগ্য হবে না এবং ভবিষ্যতে দলিল সংশোধনের সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

৩. নামজারি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ: রেজিস্ট্রিকৃত বন্টননামা দলিল ছাড়া কোনো উত্তরাধিকারী তার অংশের জমি নিজের নামে নামজারি করতে বা অন্য কারও কাছে বিক্রি, দান বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করতে পারবেন না।

৪. শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: কেউ এই আইন অমান্য করে দলিল ছাড়া জমি ক্রয় বা বিক্রয় করলে তা ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই আইনে অপরাধীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।

৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: জমির খাজনা, নামজারি এবং দখল নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও প্রতারণা এড়াতে সরকার জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই নতুন আইনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে সেইসব পরিবারের ওপর, যাদের পূর্বপুরুষদের জমি এখনো শরিকদের মধ্যে আইনসম্মতভাবে ভাগ বা বণ্টন করা হয়নি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এসব অবিভক্ত সম্পত্তি বিক্রি বা দান করার আগে অবশ্যই সকল শরিককে একত্রে বসে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ‘আপোষ বন্টননামা দলিল’ সম্পন্ন করতে হবে। এটি একদিকে যেমন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, তেমনই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিরোধের পথ বন্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print