শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

হচ্ছে না এইচএসসি পরীক্ষা , জেএসসি ও এসএসসির গড় করে ফলাফল!

প্রভাতী ডেস্ক : এবছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলেও দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় মার্চের মাঝামাঝি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় আটকে যায় এইচএসসি পরীক্ষা।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মত এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও নেবে না সরকার।

আটকে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চিরাচরিত নিয়মে না নিয়ে এসব শিক্ষার্থীর অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি জানিয়েছেন।

বুধবার (৭ই অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা অতিক্রম করে এসেছে। এদের জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে।”

কীভাবে দুই পরীক্ষার ফলাফলের গড় করা হবে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে যারা বিভাগ পরিবর্তন করেছে তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে সে বিষয়ে মতামত দিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দীপু মনি বলেন, সেই কমিটির মত নিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির চূড়ান্ত মূল্যায়ন ঘোষণা করা হবে, যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

গত ১লা এপ্রিল থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, যাতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর।

কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও আটকে যায়।

বছর প্রায় শেষ হয়ে আসায় এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা যায়, তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক আর নানা পরিকল্পনা চলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে।

এক্ষেত্রে জেএসসি, এসএসসির নম্বরকেও যে মূল্যায়নে আনা হতে পারে, সে ইংগিত গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক মত বিনিময় সভায় দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে পরীক্ষা যে নেওয়াই হবে না, সেই সিদ্ধান্ত বুধবারই তিনি জানালেন।

উচ্চ মাধ্যমিকের পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায় যায়। ভবিষ্যতে তারা কীভাবে কোন পেশায় যেতে পারবে, এ পর্যায়েই তা অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়ে যায়।

ফলে এইচএসসির ফলাফল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মহামারীর এই নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প মূল্যায়নে যেতে হচ্ছে সরকারকে।

এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “গতবার যারা ফেল করেছে, তাদেরও জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।”

উচ্চ মাধ্যমিকে একজন শিক্ষার্থীকে সাতটি বিষয়ে ১৩টি পত্রে পরীক্ষায় বসতে হয়। এর মধ্যে দুই বিষয়ে (সর্বোচ্চ চার পত্র) ফেল করলে পরের বছর শুধু ওইসব বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল।

এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন নিয়মিত, দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে।

অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এক বিষয়ে ফেল করেছিলেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে ৫১ হাজার ৩৪৮ জন ফেল করেছিলেন।

এছাড়া ৩ হাজার ৩৯০ জন প্রাইভেট পরীক্ষার্থীরও এবার এইচএসসিতে অংশে নেওয়ার কথা ছিল। গতবার পাস করলেও আরো ভালো ফলের জন্য এবার পরীক্ষায় বসতে চেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থী।

এসব তথ্য তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, “কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে এবং কখন পরীক্ষা নেওয়ার মত অনুকূল পরিস্থিতি হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই, এটি আমরা সবাই বুঝতে পারছি। এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা যায় তার পরিকল্পনা করাও খুব একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

“পরীক্ষা চলাকালে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কীভাবে কমানো যায়, বিদ্যমান প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় সে বিষয়টিও ভাবতে হয়েছে। কারণ একেকজন শিক্ষার্থীকে ৭ বিষয় ১৩টি পত্রে পরীক্ষা দিতে হয়।”

মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩০-৩২ কর্মদিবসের প্রয়োজন হয়। ২ হাজার ৫৭৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। এমনিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে এক বেঞ্চে ‍দুইজন শিক্ষার্থীকে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়।

“কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় এক বেঞ্চে দুইজন পরীক্ষার্থীর আসন রাখা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নিতে গেলে দ্বিগুণ পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচন করার প্রয়োজন পড়বে। বিদ্যমান কেন্দ্রভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্যাকেট করা হয়েছিল। প্যাকেট ভেঙে নতুন প্যাকেট করারও কোনো সুযোগ নেই।

“এছাড়া কেন্দ্র দ্বিগুণ করতে হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার জন্য যে জনবল, তাও দ্বিগুণ করতে হবে এবং বর্তমান সময়ে শিক্ষাবোর্ডগুলোর পক্ষে এ উদ্যোগ নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু আমাদের জনবল নয়, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসনের জনবলেও বিষয়ও জড়িত রয়েছে।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয় কমিয়ে কিংবা সিলেবাস কমিয়েও হয়ত পরীক্ষা নেওয়া যায়, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“আমরা যে বিষয় বা পত্র কমিয়ে পরীক্ষা নেব, হয়ত সেই বিষয়ে কোনো পরীক্ষার্থীর অনেক ভালো একটা প্রস্তুতি ছিল। সেই পরীক্ষার্থীও মনে করতে পারে যে সে ক্ষতিগ্রস্ত হল।

“অন্যদিকে আমরা পরীক্ষা শুরু করলাম, তখন যদি কোনো পরীক্ষার্থী কোভিডে আক্রান্ত হয় কিংবা যখন পরীক্ষা নেওয়া শুরু হচ্ছে তখন পরীক্ষার্থী আক্রান্ত হল বা তার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হল, তাহলে সেই পরীক্ষার্থীর কী হবে? সে তো তখন নিশ্চয় পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে পারবে না বা আসা উচিত নয়।”

এসব বিষয় বিবেচনা করতে গিয়ে অন্যান্য দেশ কী করেছে, সেসব তথ্যও বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যববস্থাপক, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে এ বিষয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করেছেন।

“তার উপর ভিত্তি করে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”

কিন্তু পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডগুলোর জন্য একেবারেই নতুন ধারণা। ফলে কীভাবে মূল্যায়ন করা হলে ফলাফল দেশে এবং বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে এর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না- তা বিবেচনা করতে হচ্ছে বলে জানান দীপু মনি।

তিনি বলেন, এসএসসিতে যে যে বিভাগে পাস করে, তাদের অনেকে এইচএসসিতে গিয়ে বিভাগ পরিবর্তন করে। তাদের মূলায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়েও সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে পরামর্শক কমিটিকে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি ছাড়াও কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের রাখা হয়েছে।

আগের দুই পরীক্ষার ফলফলের ভিত্তিতে মূলায়নে কারো কারো ক্ষতি হবে কি না, এই প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অনেক প্রশ্ন আসতে পারে, কী হতে পারত এই রকম একটি পরিস্থিতিতে সব প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারবে না।

“অনেকে জেএসসি ও এসএসসিতে সর্বোচ্চ ভালো ফল করছে, এই পরীক্ষা দিতে গেলে হয়ত কোনো কারণে তার পরীক্ষা ভালো নাও হতে পারত, কোনো কারণে হয়ত পরীক্ষা শেষ করতে পারত না, এমনও তো হতে পারত। অনেক কিছুই হতে পারে।

“কী হতে পারে বা হতে পারত, সেটি এই ‍মুহূর্তে বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই। সেই কারণে আমাদের হাতে যা আছে, তার উপর ভিত্তি করেই ফলাফলটা দিতে হবে। সব বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই।”

জেএসসি ও এসএসসির কোন পরীক্ষার কত শতাংশ করে বিবেচনা করে এইচএসসির ফল তৈরি করা হবে পরামর্শক কমিটি সেই সুপারিশ করবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “জীবনযুদ্ধ চলছে,… যারা চাকরিদাতা তারাও ভবিষ্যতে বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবেন। এদের অধিকাংশই তো এখনই চাকরিতে যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। জীবনের ঝুঁকি এড়িয়ে সর্বোচ্চ ভালো কী করতে পারি, আমরা সেই চেষ্টা করছি। সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারব তা কিন্তু নয়।”

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মতামত দেবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলোই আমরা অনুসরণ করতে যাচ্ছি। শুধু আমরা এভাবে মূল্যায়ন করছি তা নয়, ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিস দেখে পরামর্শক কমিটি মতামত দেবে।”

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print