প্রভাতী ডেস্ক : করোনায় কর্মহীন দিনমজুরদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া ত্রাণ থেকে ২৫% চেয়েছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
তার জন্য ২৫ শতাংশ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের নামে ১৫ শতাংশ সরকারি ত্রাণ ভাগ করে বাকি ৬০ ভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নামে বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সরকারি ত্রাণের ২৫ শতাংশ চাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাঝে। সংসদ সদস্যের এভাবে ত্রাণ চাওয়াকে অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কর্তৃত্ব তৈরির চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দেওয়া এক চিঠির মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ত্রাণ চান লোহাগাড়া-সাতকানিয়া (আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
তবে এমপি নদভীর দেওয়া চিঠির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম ও লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌছিফ আহমেদ। যদিও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর দেওয়া চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলাভিত্তিক ত্রাণ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু তিনি সরাসরি ত্রাণ চান না। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় সরকারি ত্রাণ। আর পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পৌরসভার মেয়রের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
কোনো এলাকায় অসহায় লোকের সংখ্যা বেশি হলে ওই এলাকায় বরাদ্দ বেশি দিতে সংসদ সদস্য চাইলে পরামর্শ দিতে পারেন।
সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর দেওয়া চিঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য ১৫ শতাংশ ত্রাণ চাওয়া হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেব ও লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। তাদের জন্য ১৫ শতাংশ ত্রাণ চাওয়ার বিষয়ে সাংসদ নদভী কোনো আলাপ করেননি বলে জানিয়েছেন দুই উপজেলা চেয়ারম্যান।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব বলেন, এমপি নদভী সাহেব আমাদের জন্য ১৫ পার্সেন্ট সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছেন শুনেছি। কিন্তু কেন চাইলেন তা জানি না। আমরা তো ত্রাণ বিতরণ কাজের সঙ্গে জড়িত নই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা সরকারি ত্রাণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, এমপি সাহেব এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেননি। তিনি নিজেই এমন ভাগবাটোয়ারার হিসাব দিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নেজাম উদ্দীন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকার ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়। আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ত্রাণ বিতরণ করি। ইউনিয়নে যত অসহায় মানুষ রয়েছে তাদের তালিকা রয়েছে আমাদের কাছে। আমরা প্রত্যেককেই পর্যায়ক্রমে ত্রাণ দিয়ে আসছি।
তিনি আরো বলেন , শুনেছি এমপি সাহেব একটি চিঠি দিয়ে তার জন্য ২৫ শতাংশ সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছেন। আবার আমাদের জন্য ৬০ শতাংশ বরাদ্দ চেয়েছেন। তিনি এমন হিসাব কীভাবে করেছেন- তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এমপি সাহেব ত্রাণ বরাদ্দ নিশ্চয়ই চেয়েছেন তার আসনের মানুষের জন্যই। যাকে তিনি ত্রাণ দেবেন তিনি তো এই এলাকার বাসিন্দা। আমাদের তালিকায় সবার নাম রয়েছে। কারো জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে বললেই তো ওই অসহায় ব্যক্তি ত্রাণ পান। তিনি এটি না করে ভিন্ন পথে হেঁটেছেন। এটি একপ্রকার কর্তৃত্ব তৈরি করা। সরকারি ত্রাণ নিয়ে কর্তৃত্ব কীসের?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতকানিয়ার এক জনপ্রতিনিধি বলেন, এমপি নদভী সাহেব যে চিঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখেছেন তাতে পৌরসভার কোনো নামই নেই। পৌরসভার বাসিন্দারা কি উনার সংসদীয় আসনের জনগণ নয়?
এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।