প্রভাতী ডেস্ক: তারা ৫জনই কথিত পীরের মুরিদ ছিল। যাতায়াত করতো রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার শান্তিনিকেতনে কথিত পীর শাহ মো. তবারক হোসেনের বাসায়। পীরের কাছে অনেক টাকা-পয়সা দেখে লোভে পড়ে যায়। পরিকল্পনা করে বুধবার (২৫ডিসেম্বর) কথিত ওই পীরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
পীরকে হত্যার পর লুট করে নিয়ে যায় নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ঘটনার ১দিনের মাথায় পাঁচ খুনিকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৩ জনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনও সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।
বুধবার ভোরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শান্তিনিকেতন এলাকায় নিজ বাসায় খুন হন কথিত পীর ও ব্যবসায়ী শাহ মো. তবারক হোসেন (৭০)। এ ঘটনায় তার পালিত পুত্র সাইফুলও আহত হন। তবারক মহাখালীর মামা প্লাজার মালিক। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি চট্টগ্রামের শফি মাইজভান্ডারীর অনুসারী ছিলেন। সেই সুবাদে তার বাসায় অনেক মুরিদ আসা-যাওয়া করতো।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তবারকের ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজায় দুর্বৃত্তরা। ভেতর থেকে সাইফুল দরজা খুলে দিলে পাঁচ দুর্বৃত্ত ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সাইফুলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কথিত পীর তবারককে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এরপর তারা আলমারি ভেঙে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর সাইফুল বিষয়টি প্রতিবেশী ও পুলিশকে জানালে পুলিশ সেখানে গিয়ে তবারককে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়ী বা মতাদর্শের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তবারককে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমীন ও শাহ আলমকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে ঘটনার পর থেকে বাসার নিচে থাকা কথিত পীর তবারকের এক মুরিদ হাসান পলাতক ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে একজন খুনির একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ওই ফোনের সূত্র ধরে অন্য খুনিদের শনাক্ত করা হয়। খুনিরা সবাই আগে থেকেই শাহ তবারকের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো। তবারকের বাসায় নগদ টাকা রাখার বিষয়টি জানতে পেরে তারা ওই টাকা লুট করার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩টি ছুরি নিয়ে তারা ওই বাসায় গিয়ে তবারককে হত্যার পর টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, শান্তিনিকেতন এলাকার মসজিদ গলির ওই বাসার চতুর্থ তলায় নিজ ফ্ল্যাটে পালক ছেলে সাইফুলকে নিয়ে থাকতেন তবারক হোসেন। তার স্ত্রী পারভীন ইসমত আরা মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় দুই মেয়ের সঙ্গে আলাদা থাকতেন।
তবারকের এক ছেলে শাহাদাত হোসেন তুষার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তবারক হত্যার ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।