প্রভাতী ডেস্ক: হোটেল ব্যবসায়ীকে থানায় আটকে রেখে দেড় কোটি টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সালাহউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে দু’জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। অন্য আসামি হলেন নগরীর মনোহরপুর ঊজির দীঘিরপাড় এলাকার মেসার্স এম আলমের মালিক মো. মাহাবুব আলম (৫২)।
রবিবার(১ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর মনোহরপুর সদর হাসপাতাল রোড এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মো. মহিউদ্দিন (৫২) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক জালাল উদ্দিন মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
চেক নেওয়ার ঘটনায় মামলার বাদী মহিউদ্দিনের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলার দ্বিতীয় আসামি তার চাচাতো ভাই মাহাবুব আলম ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টার দেখিয়ে মহিউদ্দিনের জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করায় মাহবুবের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। এরপর থেকে মাহবুব মামলার ভয় দেখিয়ে মহিউদ্দিনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। মহিউদ্দিন ব্যাংকের আদেশ ছাড়া কোনো টাকা দেবেন না বলে জানান।
আরো অভিযোগ করা হয়, পরবর্তী সময়ে গত ৩ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে মাহাবুব নগরীর হোটেল সালাউদ্দিনের ক্যাশে বসা থেকে মহিউদ্দিনকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় তুলে নিয়ে যান।
মহিউদ্দিনকে থানায় নিয়ে পুলিশ ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিনের রুমে আটক রাখা হয় এবং বাড়ি থেকে চেক বই নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। পরে মহিউদ্দিন বাড়ি থেকে ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে থানায় চেক বই নিলে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে চাপ দেন সালাহউদ্দিন ও চাচাতো ভাই মাহবুব। হুমকির মুখে মহিউদ্দিন তার শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নম্বরের একটি চেকে (চেক নং- ০০০০০২২) ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা লিখে দেন। এ ছাড়া সাদা কাগজে মহিউদ্দিন ও উপস্থিত কয়েকজন ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছাড়া হয়।
পরিদর্শক সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন বলেন, ‘থানায় তুলে নেওয়া পর দেড় কোটি টাকার চেক মাহাবুবের জন্য আদায় করতে পরিদর্শক সালাউদ্দিন আমাকে হুমকি, মিথ্যা মামলার ভয় এবং নানা চাপ প্রয়োগ করেন। ঘটনার পর জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর আমি অভিযোগ করেছি। এরপর আদালতে মামলা দায়ের করি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক তদন্ত মো. সালাহউদ্দিন এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘চেকের সমস্যা বাদির চাচাতো ভাই মাহাবুবের সঙ্গে। এখানে আমি জড়িত নই। মামলার বিষয়ে এখনো আমি আদালত থেকে কোনো কাগজপত্র পাইনি।’
মামলার দ্বিতীয় আসামি মাহাবুব আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী সামসুন নাহার সুইটি ২৮ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই মামলায় তার পরকীয়াসহ তিনটি বিয়ের কথা উল্লেখ করা হয়।