এম.জিয়াউল হক: দেখতে দেখতে এসে গেল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশ নির্বাচন-২০২০। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রদানে সততা, সমাজসেবা এবং তারুণ্যকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হবে এমন ইঙ্গিত রয়েছে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপিতে। অনেক এলাকায় দেখা যায় যেই কাজে নির্বাচিত কাউন্সিলরের অসহায়ত্ব সেখানে তরুণ সমাজসেবকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অর্থাৎ কাউন্সিলরের কাজ তারাই করে ফেলতেছেন। এভাবেই জয় করতেছেন এলাকাবাসীর হৃদয়। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এসব তরুণ সমাজসেবকরা নির্বাচিত হয়ে এলাকার সেবা করার সুযোগ পেলে তাদের দুঃখ-দূর্দশা লাঘব হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে ছোট, অবহেলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড। চকবাজার এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ, সরকারী হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজ, কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন গার্লস হাই স্কুল, কাপাসগোলা মহিলা কলেজ, গুলএজার বেগম সিটি কর্পোরেশন গার্লস হাই স্কুলসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই এই এলাকাকে শিক্ষানগরীও বলা হয়। এছাড়া এই এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো আধুনিক শপিং মল এবং হাসপাতাল। সেই সুবাধে প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের যাতায়াত এই এলাকায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সায়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু মহোদয় টানা ৩০ বছর কাউন্সিলর হিসাবে দায়িত্ব পালনের পরেও আশানুরূপ উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি বলে জানান এলাকার জনসাধারণ।
এই ওয়ার্ডের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩১হাজার হলেও এবার নতুন ভোটারসহ ৩৫হাজারের বেশী হবে। এলাকাবাসী এবার নতুন করে হিসাব কষতে চান। তারা তাদের এলাকার উন্নয়নের জন্য তরুণ, সৎ, মেধাবী, জনদরদী সর্বোপরি যোগ্য কাউন্সিলর চান।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যেই এলাকায় বাস করেন অর্থাৎ ১৬নং ওয়ার্ডে গত ২০-২৫ বছরে নতুন করে কোন উন্নয়ন হয়নি। আগের রাস্তাঘাট এবং অলিগলিতে শুধু মেরামতের কাজ চলে। যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়ের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এই পর্যন্ত এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে কোন উদ্যোগ তাদের চোখে পড়েনি বলেও জানান। এলাকাবাসীর মতামত হলো বর্তমান কাউন্সিলর এর ব্যর্থতা নিয়ে তারা আর কিছু বলতে চান না, তারা আগামীতে একজন যোগ্য কাউন্সিলর চান।
এলাকাবাসীরা আরো জানান, বর্তমান কাউন্সিলর মিন্টু সাহেবের অনেক বয়স হয়েছে, তিনি বার্ধক্যজনিত রোগেও আক্রান্ত। সুতরাং তার পক্ষে এই এলাকার উন্নয়ন আর সম্ভব নয়। এছাড়া যিনি ৩০ বছরে দৃশ্যমান কিছু করতে পারেননি তিনি আবার সুযোগ পেলে কি আর করবেন? তাই তারা এবার নতুন মুখ দেখতে চান।
নাম প্রকাশ না করে একজন পঞ্চাশোর্ধ এলাকাবাসী প্রশ্ন রেখে বলেন, সারাদেশে যখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল তখন চট্টগ্রাম শহরের সব জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কীটনাশক ছিটানো হলেও শুধুমাত্র ১৬নং ওয়ার্ড কেন বাদ পড়লো? ঐসময় তরুণ সমাজসেবক দেলোয়ার এলাকাবাসীকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিজের টাকায় শত শত লিটার কীটনাশক ছিটিয়েছিল। তিনি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান, এছাড়া আমাদের সুখে-দুঃখে দেলোয়ারকে কাছে পাই। এই ধরণের তরুণ এবং সৎ কাউন্সিলর আমাদের খুব দরকার।
কাউন্সিলর নির্বাচনে কেমন আগ্রহ জানতে চাইলে তরুণ সমাজসেবক ও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ বলেন, এলাকাবাসীর অনুরোধেই তার মনে নির্বাচনের আগ্রহ জেগেছে। নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হতে পারলে এলাকাবাসীর জন্য কিছু কাজ করতে চাই। তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে এলাকার জলবদ্ধতা,সন্ত্রাস এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করা। এছাড়া গুলজার মোড়ে একটা ফুটওভার ব্রীজ এবং পুরা এলাকা সিসি ক্যামরার আওতায় আনা এলাকাবাসীর স্বপ্ন, এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে আমার অন্যতম লক্ষ্য। সর্বোপরি এই এলাকাকে নতুনরূপে সাজাতে চাই। সিটি করপোরেশনের বাজেট না পেলে কিভাবে কাজ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র মহোদয়কে অনুনয়-বিনয় করে বরাদ্দ নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, এছাড়া সব কাজ তো করপোরেশনের অর্থ দিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমার সাথে অনেক প্রাইভেট এবং স্বায়ত্তশাসিত কোম্পানীর সুসম্পর্ক রয়েছে, আমি নির্বাচিত হলে সেই কোম্পানিগুলোও এলাকার উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন করবে।
উল্লেখ্য, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম ডাক্তার মোশাররফ হোসেনের কনিষ্ঠ পুত্র। নোয়াপাড়া কলেজ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তার রাজনীতির সূচনা। ফরহাদের বড় ভাই মোঃ রিদোয়ান হোসেন ইটালীতে রয়েছেন, মেজ ভাই একরাম হোসেন মহানগর যুবলীগের সদস্য ও ১৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি, সেজ ভাই জাকির হোসেন কানাডা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং ছোট ২বোন ডাক্তার ।