রবিবার, ১৩ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর হামলা ও লুটপাট

বাজিতপুরে ক্যাবল ব্যবসা দখলের চেষ্টা, দূর্বৃত্তদের হামলায় মহিলা সাংবাদিকসহ আহত ৩

সাংবাদিক রুনা আক্তার রূপা 'মনপুরা ক্যাবল নেটওয়ার্ক' এর স্বত্বাধিকারী

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানাধীন পিরোজপুর বাজারে ক্যাবল ব্যবসা দখলে নিতে মরিয়া একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র। এই চক্রের হামলায় আহত হয়েছেন ক্যাবল মালিক ও সাংবাদিক রুনা আক্তার রূপাসহ ৩জন। বৃহস্পতিবার(১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক রুনা এবং তার ভাই আবদুল কাদির গুরুতর আহত হওয়ায় জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, রুনার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা যায়।

হামলায় আহত কাদির ও সাংবাদিক রুনা

জানা যায়, জয়নগর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রুনা আক্তার রূপা ‘মনপুরা ক্যাবল নেটওয়ার্ক’ এর স্বত্বাধিকারী। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে পিরোজপুর বাজারে সুনামের সাথে ডিশ ও ওয়াইফাই ব্যবসা পরিচালনা করে আসতেছেন। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র এই নারী উদ্যোক্তার ক্যাবল ব্যবসা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। চক্রের সদস্যরা প্রায় সময় প্রকাশ্যে ও গোপনে ডিশ ও ওয়াইফাই সংযোগের তার কেটে নিয়ে যায়। সাংবাদিক রুনা এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে চক্রের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য তাকে অপূরণীয় ক্ষতি করবে বলে হুমকী দেয়। এই ঘটনায় তিনি ৭/০৪/২৫ ইং তারিখে বাজিতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। এতে প্রতিপক্ষ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এই নৃশংস হামলা চালায়। হামলায় আহত অন্য ২ জন হলেন রুনা আক্তারের ছোট ভাই আব্দুল কাদির এবং স্বামী সাংবাদিক নূরুল কবির।

কাদিরের মোটর সাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যেতে চাইলে সাংবাদিক রুনার সাথে বাকবিতন্ডা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক রুনা আক্তার রূপার ক্যাবল ব্যবসা নিয়ে হামলাকারীদের সাথে কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসতেছে। বিরোধের জের ধরে ঘটনার দিন সকাল ৮ টা থেকে পিরোজপুর বাজারস্থ রুনার ক্যাবল অফিসের সামনে কিরিচ, লাঠিসোটা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে হামলাকারীরা জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে কয়েকজন হামলাকারী অফিসের ভেতর ঢুকে রুনার ভাই কাদেরকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে চাইলে রুনা এবং তার স্বামী বাঁধা দিলে শুরু হয় বাকবিতন্ডা। হামলাকারীরা লাঠিসোটা দিয়ে তাদেরকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। হামলাকারীরা রুনার কাপড়চোপড় ছিড়ে মারাত্মক শ্লীলতাহানি করে, পরে তার মাথায় কিরিচের কোপ দিলে সে মাটিতে পড়ে যায়। কয়েকজন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কাদেরকে তুলে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায় । এসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীরা রুনাকে উদ্ধার করে বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুনার স্বামীকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রুনাকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। হামলাকারীরা তাদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয় বলেও জানা যায়। পরে পুলিশ এসে কাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

স্থানীয়রা আরো জানায়, হামলাকারীরা আগে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। তারা এলাকায় কিশোর গ্যাং হিসেবে সুপরিচিত। অনেকে ক্যাসিনো এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এলাকার অনেক যুবক তাদের ক্যাসিনোর সাথে জড়িত হয়ে এখন নিঃস্ব। তাদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক মামলাও রয়েছে। তারা এখন
নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে এবং রাজনৈতিক মামলা থেকে রেহাই পেতে বিএনপির কয়েকজন নেতার অনুুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়।

এই ঘটনায় মো: মাহিন মিয়া, মো: শাহীন মিয়া, রকি মিয়া, তারেক মিয়া, ডালিম মিয়া, সাহাবুল, সাদেক মিয়া এবং হোসেন মিয়াসহ আরো ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় এজাহার প্রদান করলেও পুলিশ এজাহার গ্রহণ না করে একটি অভিযোগ প্রদান করতে বলেন বলে জানান ভুক্তভোগীর ভাই আব্দুল কাদির।

ভুক্তভোগীর স্বামী সাংবাদিক নূরুল কবির বলেন, আমাদের উপর হামলাকারীরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিলো। চাঁদা না পেয়ে ক্যাবল কাটাসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিসাধন করতে থাকে। এই ব্যাপারে আমার স্ত্রী থানায় অভিযোগ প্রদান করলেও পুলিশ কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা এই জঘন্য ঘটনার সাহস পেলো।
তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার মামলা না করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিরিচের কোপে আমার স্ত্রীর কপালে গভীর কাটা জখম হয়েছে। আমার স্ত্রী-শ্যালকের নিকট থাকা ডিশ-ওয়াইফাই বিলের ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। হামলাকারীরা বলে বেড়াচ্ছেন তারা বিএনপি নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় তাদেরকে কিছুই করতে পারবো না, উল্টো নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবো। মূলত আমাদের ব্যবসা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে আতংক সৃষ্টি করতে তারা এই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। অজানা কারণে পুলিশের অসহযোগীতার কথা জানিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জানতে চাইলে বাজিতপুর থানার ওসি তদন্ত বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম গেছে। উভয় পক্ষই অভিযোগ প্রদান করেছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন নারী উদ্যোক্তার উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করার পরেও মামলা রেকর্ড করতে বিলম্ব কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ওসি স্যার ছুটিতে আছেন কালকে জয়েন করে ব্যবস্থা নিবেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print