প্রভাতী ডেস্ক: পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন বাবা। আর বাবার কোলেই ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু তুহিনকে ছুরি দিয়ে গলাকেটে খুন করেন চাচা নাসির উদ্দিন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তুহিন হত্যার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
ফুটন্ত ফুলের মতো এই শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যার পেছনের কারণ খুব দ্রুত উদঘাটন করেছে তদন্তকারী পুলিশরা।
ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, মূলত নিজেকে বাঁচাতে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু তুহিনকে হত্যা করেছেন বাবা আব্দুল বাছির। তুহিনকে হত্যায় বাবার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। ঘটনার দিন শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাবা আব্দুল বাছির ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর তুহিনের বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাই মিলে হত্যা করেন। এরপর তুহিনের পেটে দুটি ছুরি বিদ্ধ করে গাছে ঝুলিয়ে দেন।
হত্যার ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করে সুনামগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তুহিনের বাবা ও চাচা।
খুনিদের জবানবন্দি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পারিবারিক বিরোধ এ খুন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তুহিন হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজন। তারা হলেন – বাবা আব্দুল বাছির, চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার।
তুহিনের হত্যাকারী তার বাবা, চাচা এবং চাচাতো ভাই এই প্রথম কোনো হত্যা মামলার আসামি হননি; তিনি একটি হত্যা মামলার পাশাপাশি আরো দুটি মামলার আসামি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এএসপি মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দিরাইয়ের ওই এলাকায় আরো দুটি খুনের ঘটনা ঘটে। ওসব মামলার আসামিদের তালিকায় তুহিনের বাবা-চাচা এবং চাচাতো ভাইয়ের নাম রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পারিবারিক বিরোধ ও এক হত্যা মামলার জেরে বলি হলো তুহিন। আব্দুল বাছির প্রতিপক্ষের করা হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে সন্তানকে এভাবে নৃশংসভাবে খুন করেছেন তিনি।
দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছরে এই গ্রামে অপ্রত্যাশিত কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গ্রামের কোন্দলের প্রধান হোতা হচ্ছে তুহিনের চাচা মছব্বির ও নাসির। ঘটনার দিন আগের একটি মামলা আপোস-মীমাংসার কথা ছিল, কিন্তু তুহিনের চাচারা মানেনি। আপস হলে টাকা পাবে প্রতিপক্ষের লোক- তাই টাকার লোভে এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে ওই পাষণ্ডরা।
রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী বলেন, এটা ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা।
ঘটনার দিন আমি গ্রামে যাই, তুহিনের চাচা মছব্বির ও নাসিরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা এড়িয়ে যায়। মছব্বিরই মূল হোতা, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ আনোয়ার মেম্বারকে ফাঁসানোর জন্যই এই ন্যক্কারজনক পরিকল্পনা করে। গ্রামের কোন্দল সৃষ্টি করাই মছব্বিরের কাজ। দ্রুত বিচার আইনে খুনিদের বিচার করার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউড়া গ্রামে শিশু তুহিন হত্যা মামলায় তুহিনের বাবা আবদুল বাছির ও চাচা আবদুল মোছাব্বির এবং জমসেদকে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার বিকালে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের বিচারক শ্যাম কান্ত সিনহা এ রিমান্ড মঞ্জুর করনে। এর আগে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে ৩ জনকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু তাহের মোল্লা।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া কেজাউড়া গ্রাম থেকে তুহিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে গ্রামের আবদুল বছির মিয়ার ছেলে।
হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির কান, গলা ও প্যানিস কেটে পাশবিক কায়দায় হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল। শিশুটির পেটে বিদ্ধ ছিল দুটি ধারালো ছুরি। শিশুর মরদেহে বিদ্ধ ছোরা দুটির হাতলে সোলেমান ও সালাতুলের নাম লেখা ছিল।