প্রতিবেদন -১
এম.জিয়াউল হক: চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা সংলগ্ন অনুমোদনহীন ভূয়া আল- বারাকাহ-ওমরা ও হজ্ব ট্রাভেলস এর পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এবং মোহাম্মদ হারুনুর রশীদের অভিনব কৌশলে প্রতারণার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেকে। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম হজ্ব সংক্রান্ত হলেও তাদের মূল কাজ হলো কম্বোডিয়া, মালেশিয়া, কানাডা, ইটালীসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এছাড়া তারা মানি এক্সচেঞ্জ এবং হুন্ডি ব্যবসার সাথেও সম্পৃক্ত।
লিপলেট এবং পরিচালকদের ভাষ্যমতে আল -বারাকাহ- ওমরাহ্ ও হজ্ব ট্রাভেলস এর পরিচালনা করেন স্বনামধন্য হজ্ব-ভিসা এজেন্সী চট্টগ্রামের মুরাদপুরস্থ আল-হারামাইন -ট্রাভেলস – এন্ড হজ্ব কাফেলা। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে আল-হারামাইন -ট্রাভেলস – এন্ড হজ্ব কাফেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইদ্রিছ আল কাদেরী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় তাদের প্রতিষ্ঠান জড়িত না, তবে পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আল- বারাকাহ-ওমরা ও হজ্ব ট্রাভেলস এর শতাধিক প্রতিনিধি রয়েছে। তারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বেকার যুবকদেরকে বিদেশে গমন করে মোটা অংকের অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে নিয়ে আসে। বিদেশ গমনেচ্ছুরা অফিসে আসলেই পরিচালক নামধারী প্রতারক আলহাজ্ব মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এবং মোহাম্মদ হারুনুর রশীদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সহায়-সম্পত্তি বন্ধক-বিক্রি করে ৫-৭ লক্ষ টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়। সেই টাকা হাতিয়ে নিয়ে হারুন-জাহেদ সম্পদের পাহাড় গড়ে, আনন্দ ফূর্তি করে আর ভূক্তভোগীরা পথের ভিখারী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া মানব পাচার এবং রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট -ভিসা প্রসেসিং করার গুরুতর অভিযোগও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে উক্ত প্রতিষ্ঠানের (চান্দগাঁও থানা সংলগ্ন নূর মোহাম্মদ বিল্ডিংয়ের ৩য় তলায়) অফিসে গেলে সেখানে অবস্থানরত হারুন ক্যামেরা দেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
বাড়ী মালিকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রায় ২মাস পূর্বে ১লক্ষ টাকা সেলামী দিয়ে তারা এই অফিসটা নিয়েছেন। দিনে অফিসে তেমন লোকজন না আসলেও রাতে প্রচুর লোকজন আসেন। এই বিল্ডিংয়ে আসার আগে তাদের অফিস ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় ছিল বলে জানায়। সাইনবোর্ডে থাকা নাম্বারে হারুনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুরাদপুরস্থ আল-হারামাইন -ট্রাভেলস – এন্ড হজ্ব কাফেলার অফিসে যেতে বলেন। সেখানে গেলে প্রতারক জাহেদ এবং হারুন এই বিষয়ে প্রতিবেদন না করতে হাত-পা ধরে নগদ ২লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে বলেন তারা এই ব্যবসা আর কখনো করবেন না। আল-হারামাইনের কয়েকজন পরিচালকও প্রতিবেদন না করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান এবং প্রতিবেদন করলেও তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করতে বলেন।
জানা যায়, পরিচালক জাহেদ প্রতারণার টাকায় বাকলিয়ার রসুলবাগ এলাকায় ৪গন্ডা জায়গার উপর ৩ তলা একটি বিলাসবহুল বাড়ী নির্মাণ করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকা। সরেজমিনে সেই বাড়ীতে গেলে জাহেদের ভাতিজা প্রথমে বাড়ীটি তার চাচা জাহেদের বললেও পরে তার বাবার বলে কৌশলে এড়িয়ে যায়। গ্রামের বাড়ী বাঁশখালীতে রয়েছে প্রচুর ফসলী জমি। এছাড়া নামে বেনামে তার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে মর্মে জানা যায়।
অপর পরিচালক হারুনেরও রয়েছে অঢেল সম্পদ। প্রতারণার টাকায় পলি ক্লিনিক এবং মেডি এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ী বাঁশখালীতেও অনেক জমি রয়েছে। নামে -বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে প্রচুর টাকা রয়েছে তার।
মনির উদ্দীন কালু নামের বাঁশখালীর এক ভুক্তভোগী বলেন, তাকে ২০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট সৃজনসহ ৫৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দিয়ে কম্বোডিয়া পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে ২লক্ষ ৭০হাজার টাকা নিয়েছে পরিচালক হারুন। কিন্তু ৪-৫দিন ধরে হারুন কল রিসিভ করেনা, অফিসও বন্ধ থাকে। টাকা প্রদানের কোন রকম রসিদ না থাকায় তিনি আইনের আশ্রয়ও নিতে পারতেছেন না। তাই সাংবাদিকদের ধারস্থ হয়ে তিনি তার বাবার জমি বিক্রি করা টাকাটা ফেরত চান।
এই এজেন্সীর ব্যাপারে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, এরকম কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে কেউ কোনরকম অভিযোগ প্রদান করেন নি। এই ধরণের ভুয়া এজেন্সিগুলো বিশেষ করে মানব পাচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। তাই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আটাব চট্টগ্রাম জোনের সচিব এইচএম মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন, চট্টগ্রামে এই নামের কোন হজ্ব এজেন্সী নেই, এরা একটা প্রতারক চক্র। তারা মানব পাচার, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট সৃজন-ভিসা প্রসেসিংয়ের মত জঘন্য কাজের সাথে জড়িত। এই ধরণের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।