প্রভাতী ডেস্ক: কোরবানির পরদিন থেকে বুধবার (১৪ আগস্ট) পর্যন্ত চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ আতুরার ডিপো-হামজারবাগ এলাকা থেকে এক লাখ, বহদ্দারহাট থেকে ৯ হাজার এবং আগ্রাবাদ থেকে ১২ হাজারের বেশি পঁচা চামড়া নগরীর হালিশহর আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরের আবর্জনার ভাগাড় ফেলেছে বলে জানিয়েছে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত চামড়ার দাম না পাওয়ার পেছনে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠিত চক্রের দুরভীসন্ধি আছে কি না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ঘটনায় কোরবানী দাতারা হতাশ, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব এবং দেশ বঞ্চিত হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে। তিনি আরো বলেন, চামড়া পঁচবে, সেই চামড়া চসিককে অপসারণ করতে হবে এই ধরনের কোনো ভাবনাই আমাদের কোনো কালে ছিলো না। পুঁজি হারিয়ে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা পঁচা চামড়ার স্তূপ রেখে ঘরে ফিরেছেন।
ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ২০০ শ্রমিক ও ৮টি পে-লোডারের সাহায্যে ৩২টি ট্রাকে ৯০ ট্রিপে লক্ষাধিক পঁচা চামড়া অপসারণ করা হয়।
চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা জানান, এটি একেবারে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। চাকরি জীবনে এমনটি আর দেখিনি। বড় বড় গরুর সুন্দর সুন্দর চামড়া পঁচে-গলে গেছে। যত রাত হচ্ছিলো তত দুর্গন্ধ বাড়ছিলো। আমরা ১০০০ কেজি ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েছি পঁচা চামড়া অপসারণের জায়গাগুলোতে।
৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী জানান, চার বছর সফলতার সঙ্গে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছি। এতদিন আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিলো-আড়তদারেরা চামড়ায় লবণ দেয়ার পর সড়কে ফেলা পশুর কান, লেজ, পঁচা মাংস এসব বর্জ্য দ্রুত অপসারণ। এবার নতুন সমস্যা পঁচা চামড়া অপসারণ। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশনায় এ সমস্যাও দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ত হামজারবাগ-আতুরার ডিপো। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এখানে ট্রাকে ট্রাকে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন মৌসুমী ব্যাপারি আর বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজন। কিন্তু এবার চামড়ার দামে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।
ক্রেতারা প্রথমে ৩০০ টাকায় বড় চামড়া কিনছিলেন। এরপর ২০০-১০০ টাকায় নেমে আসে। তারপর ক্রেতার দেখা মেলেনি বাজারে। চামড়া নিয়ে যেসব ট্রাক এসেছিল অনেকে ভাড়াটাও তুলতে পারেনি চামড়া বিক্রি করে। পরে এক পর্যায়ে চামড়ার স্তুপ, ট্রাকভর্তি চামড়া ফেলেই পালিয়ে যান তারা।
তিনি আরো বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানলাম, চট্টগ্রামের আড়তদারেরা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে গত বছরের যে টাকা পাবে তার সিকি ভাগও দেয়নি। এর ফলে তারা পর্যাপ্ত লবণ এবং শ্রমিক জোগাড় করতে পারেনি। দাম কম থাকায় ধার-দেনা করে কিছু চামড়া সংগ্রহ করে তারা বাজার থেকে সরে পড়ে। যদি পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকতো তবে বাকিতে হলেও চামড়া নিতে পারতো।’