প্রভাতী ডেস্ক: আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র হজ্ব।ইসলাম ধর্মের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি হচ্ছে পবিত্র হজ্ব। আর্থিকভাবে সামর্থ ও শারীরিকভাবে সক্ষম পুরুষ ও নারীর জন্য হজ ফরজ। এবার হজ পালন করতে বাংলাদেশসহ ১৭২টি দেশের প্রায় ২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে পবিত্র হজ পালন করছেন।এর মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। এটাকেই হজ্বের মূল অনুষ্ঠান বলা হয়।
মুসল্লিরা গত বৃহস্পতিবার রাতে মিনায় পৌঁছেন। গতকাল শুক্রবার সারা দিন ও রাত মিনায় অবস্থান করেন এবং ফজরের নামাজ পড়েই আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হন।
হাজিরা ট্রেনে, বাসে ও হেঁটে আরাফাতের ময়দানে হাজির হচ্ছেন। লাখো কণ্ঠে ছিল একটাই রব, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা।’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)।
সৌদি আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ আরাফাতের ময়দান ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার সামান্য বেশি। এদিন এখানে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা। শুক্রবার মিনায়ও একই তাপমাত্রা ছিল। মুজদালিফায় তাপমাত্রা তেমনই থাকবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, মিনার তাঁবুগুলো ঠাণ্ডা রাখতে শুক্রবার সাড়ে তিন লাখ এসি ব্যবহার করা হয়েছে।
দুই মাইল দৈর্ঘ্য ও দুই মাইল প্রস্থের বিরাট ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড় বেষ্টিত। জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। বলা হয়ে থাকে, এই পাহাড়ে হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর দেখা হয়েছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই আরাফাতের ময়দানেই জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলে।
হজের তিন ফরজের মধ্যে ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ হাজ্বীরা তো যাবেনই। তাদের মধ্যে যারা অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁদেরকেও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হয়। কারণ, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ।
৯ জিলহজ্ব আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না হলে হজ হবে না। তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান (হাজি) মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করেন। কেউ কেউ যান জাবালে রহমতের কাছে। কেউ কেউ যান মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা শুনতে।
আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর এক আজানে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে আবারও এক আজানে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্থাৎ ৭০টি পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে। মুজদালিফায় আগামীকাল রবিবার ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ গাড়িতে, কেউ বা হেঁটে মিনায় যাবেন এবং নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরবেন।
মিনায় ফিরে কাল বড় শয়তানের উদ্দেশে সাতটি পাথর ছুড়বেন হাজিরা। এরপর তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পশু কোরবানি দেবেন। মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করে ইহরাম (সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড়) বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। এরপর মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনে দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সায়ি’ (সাতবার দৌড়) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন। আবার মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন।