Search

রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার

রাকসু নির্বাচনে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদে শিবির বিজয়ী

হল সংসদ এবং সিনেটেও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ তিনগুণ বেশি ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের এসএম সালমান সাব্বির। জিএস, ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার। ছাত্রদলের ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি করে পদে বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া হল সংসদ এবং সিনেটেও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। শুক্রবার(১৭ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় রাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এই ফলাফল ঘোষণা করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ১৭ হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। দিনভর পালটাপালটি অভিযোগের মধ্যে বিকাল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচনে আটটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেলসহ রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭ জন, হল সংসদে ১৫ পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ এবং ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে ছয়টি নারী হলে ভোট পড়ার হার ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ভিপি পদে ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। একই পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের শেখ নূর উদ্দীন আবীর। তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার ৩৯৭টি।

জিএস পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মারও বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৯৭টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির প্যানেলের ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৭ ভোট। আম্মার এবং ফাহিম রেজা দুজনেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।

শীর্ষ তিন পদের আরেকটি এজিএসে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এসএম সালমান সাব্বির অল্প ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭৫টি। তার নিকটতম ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫১ ভোট।

অন্যান্য সম্পাদক এবং সহসম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত বিজয়ীরা হলেন-সহকারী ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক পদে আবু সাঈদ মুহাম্মাদ নুন (সামি), সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে জায়িদ হাসান জোহা, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে সাইয়িদা হাফছা, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে সামিয়া জাহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিএম নাজমুছ সাকিব, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে সিফাত আবু সালেহ, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে মুজাহিদুল ইসলাম, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আসাদুল্লাহ গালিব, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে মুজাহিদুল ইসলাম সাঈম, বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদে ইমরান লস্কর, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদে নয়ন হোসেন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে আবদুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক পদে মাসুমা ইসরাত। এছাড়া নির্বাহী সদস্য পদের চারটিতেই শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তারা হলেন-দীপ মাহবুব, সুজন চন্দ্র, ইমজিয়াউল হক কামালি ও এবিএম খালেদ।

এদিকে জিএস পদে সালাহউদ্দিন আম্মার ছাড়া শিবির প্যানেলের বাইরে আরও দুটি পদের মধ্যে একটি ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক পদে জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় নার্গিস খাতুন নির্বাচিত হয়েছেন। নার্গিস ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থী। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা নির্বাচিত হয়েছেন।

ভিপি জাহিদের প্রতিক্রিয়া : নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নবনির্বাচিত ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা বিজয়ী এবং বিজিতদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করব। আমরা দীর্ঘ বছর ধরে রাকসু বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করেছি। সেই রাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। এখানে বিজয়ী প্রার্থীর তুলনায় বিজিতের সংখ্যা বেশি। আমি বিজিত ভাইবোনদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

জিএস আম্মারের প্রতিক্রিয়া : শুক্রবার সকালে ফল ঘোষণার পর গণমাধ্যমকর্মীদের সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা নির্বাচিতরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রত্যেক প্যানেলের পৃথক ইশতেহার ছিল। সেটি একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়। আমি সাংস্কৃতিককর্মী। সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছি। আমি দলীয় রাজনীতি করতে চাই না। দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামে-বেনামে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমি শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়েই নির্বাচিত হয়েছি। তারা পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে। আমার শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমি এটা হতে দেব না।

সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদের মধ্যে তিনটিই শিবিরের : ১১ হাজার ৪৩৭ ভোট পেয়ে জিএস হওয়া সালাহউদ্দিন আম্মার ১২ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১২ হাজার ৫৮৭ ভোট পেয়ে ভিপি হওয়া রাবি শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ৯ হাজার ৪৬৭ ভোট পেয়ে হয়েছেন সিনেট প্রতিনিধি। জিএস পদে আম্মারের কাছে পরাজিত শিবিরের প্রার্থী ফাহিম রেজা ৮ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে এখানে নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে শিবিরের প্যানেল থেকে এজিএস হওয়া সালমান সাব্বিরও ৪ হাজার ৬৯০ ভোট পেয়ে সিনেট প্রতিনিধি হয়েছেন। এছাড়া ৫ হাজার ৭০৭ ভোটে আকিল বিন তালেব নামের আরেকজন সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।

হল সংসদেও শিবিরের আধিপত্য : হল সংসদে বেশির ভাগ পদেই শিবিরের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ১৭টি হলে যথাক্রমে ভিপি, জিএস ও এজিএস হিসাবে নির্বাচিতরা হলেন-মন্নুজান হলে সুমাইয়া জাহান, তাসমেরি জাহান তন্নি ও সাবিনা ইয়াসমিন; রোকেয়া হলে অর্পণা হক, লায়লা খাতুন ও শাহানাজ পারভীন; তাপসী রাবেয়া হলে মরিয়ম খাতুন, তাওহিদা আখতার ও খাদিজা আক্তার হিয়া; রহমতুন্নেসা হলে সাইফুন নাসিরা, হাবিবা আক্তার ও আফসানা মিমি; জুলাই ৩৬ হলে সমাপিকা আহমেদ সিমি, তাসফিয়া তাবাসসুম ও ইয়াসমিন মাহমুদা; খালেদা জিয়া হলে সাবরিনা মারজান, জারিন তাসনীম ও পারভীন আরা; শেরেবাংলা হলে রানা হোসাইন, তানজিল হোসাইন ও ওমর ফারুক; লতিফ হলে নেয়ামত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম শহীদ ও রনি হাসান; হবিবুর রহমান হলে আহকমাদ আহসান উল্লাহ, আশিক শিকদার ও শহিদুল ইসলাম সুমন; মাদার বখ্শ হলে রুবেল আলী, ইব্রাহিম হোসাইন ও আবু রায়হান; হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে কাওসার হাবীব, সাচ্ছু হোসেন ও ইমরুল হাসান; সৈয়দ আমীর আলী হলে নাঈম ইসলাম, সাব্বির হোসেন ও মুন্না ইসলাম; শাহ মখদুম হলে শামীম পাটোয়ারী, বায়জীদ ও মো. জাকারিয়া; শহীদ জিয়াউর রহমান হলে মোজাম্মেল হক, আরিফুল ইসলাম ও ইসরাফিল হোসেন; শহীদ শামসুজ্জোহা হলে আশিকুর রহমান, সোয়াইব হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান আরমান; মতিহার হলে তাজুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম ও ওবাইদুর রহমান এবং বিজয় ২৪ হলে রাছেল মিয়া, ইমরুল হাসান ও শাহাদাত হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print