শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে রজব ১৪৪৬ হিজরি

মহেশখালীর পাহাড়ে তরুণীকে ধর্ষণ করলো ১৪ সিএনজি চালক : সালিশে ১০হাজার টাকা জরিমানা

আশেক এলাহী,কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলীতে চাকরিজীবী এক তরুণীকে পাহাড়ে নিয়ে ১৪ জন সিএনজিচালক ধর্ষণ করেছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। গত ৭জুলাই এই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, একটি প্রভাবশালী মহল এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই ভুক্তভোগীর পরিবার কোনো আইনি সহযোগিতা নিতে পারছে না। ওই তরুণীকে জিম্মায় রাখার নাম করে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার পরিবারের।

ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা যায়,ওই তরুণী চট্টগ্রামে চাকরি করেন । সম্প্রতি মুঠোফোনে মহেশখালীর গোরকঘাটা এলাকার এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। ওই তরুণের সঙ্গে দেখা করতেই গত ৭জুলাই(রোববার) চট্টগ্রাম থেকে মহেশখালী আসেন ভুক্তভোগী তরুণী।

রোববার সকাল ১০টার দিকে চালিয়াতলী স্টেশনে নেমে ওসমান গণি নামের এক ব্যক্তির সিএনজি রিজার্ভ করেন ওই তরুণী। সেখান থেকে প্রথমে মাতারবাড়ীর গোরকঘাটা এলাকা পৌঁছান তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন ওই তরুণী। কিন্তু তার কথিত সেই প্রেমিক গোরকঘাটা না আসায় আবার একই সিএনজিতে চালিয়াতলী ফিরে আসেন তিনি।

এদিকে যাতায়াতের টাকা না থাকায় সিএনজির ভাড়া মেটাতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে চালক ওসমান গণির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয় তার। এ সময় সেখানে আরও কয়েকজন সিএনজিচালক উপস্থিত হন। পরে সিএনজি ভাড়া পরিশোধ করতে ওসমানকে নিজের মোবাইল দিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন ওই তরুণী।

সন্ধ্যার দিকে চালিয়াতলী এলাকার আমির সালাম, এনিয়া, আদালত খাঁ নামের তিন সিএনজিচালক ওই তরুণীকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে চালিয়াতলী বালুর ডেইল পাহাড়ি ঝিরিতে নিয়ে যান। এ সময় ওসমান গনিসহ আরও ১১ জন ওই স্থানে এসে তাকে ধর্ষণ করে।

পরের দিন সোমবার সকালে মাতারবাড়ি-চালিয়াতলী সড়কের দরগাহ ঘোনা নামক স্থানে ওই তরুণীকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পান এক মাছ ব্যবসায়ী। উক্ত মাছ ব্যবসায়ী তাকে কিছু টাকা দিয়ে মাতারবাড়ী যাওয়ার জন্য বাসে তুলে দেন। ওই তরুণী বাপের বাড়ি পৌঁছানোর পর ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, এ ঘটনায় এলাকায় প্রতিবাদ শুরু হলে চালিয়াতলী সিএনজি স্টেশনের লাইনম্যান রশিদসহ একটি প্রভাবশালী মহল ধর্ষণে জড়িত চালকদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। রশিদ চালিয়াতলীর স্থানীয় মেম্বার লিয়াকত আলী ও মাতারবাড়ী মহিলা মেম্বার শামীমার শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা আরো জানান, পর পর দু’বার থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলেও মেম্বার লিয়াকত-শামীমার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তারা বিষয়টিকে ‘মীমাংসা’ করবেন বলে ওই তরুণীকে জিম্মায় নেন। এ নিয়ে দুবার সালিশও বসে। কিন্তু কোনো মীমাংসা না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিজ জিম্মায় নেন শামীমা।

সর্বশেষ গত ১০ জুলাই(বুধবার) মেম্বার লিয়াকত আলীর অফিসে ‘চূড়ান্ত’ সালিশী বৈঠক বসে। সেখানে ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের লাঠিপেটা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সালিশে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও তা এখনো দেওয়া হয়নি। তাছাড়া জিম্মায় রাখার নাম করে তাদের মেয়েকে মেম্বার শামীমা আটকে রেখেছেন।

এ বিষয়ে চালিয়াতলীর মেম্বার লিয়াকত আলী বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাটি সত্য। মাতারবাড়ী এলাকার সিএনজি স্টেশনের লাইনম্যান রশিদ এ ঘটনার মূল হোতা। তাদের লাঠিপেটা করে জরিমানাও করা হয়েছে।’

তবে মাতারবাড়ীর সিএনজি লাইনম্যান রশিদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, দুই মেম্বার মিলে বিষয়টি সমাধান করছেন। টাকার ব্যাপারেও তিনি কিছু জানেন না।

মাতারবাড়ীর মেম্বার শামীমার সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শামীমাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামিরুল ইসলাম জানান, “আমি ঘটনা জেনেছি। যেভাবে মীমাংসার কথা বলা হচ্ছে তা কোনো কায়দায় পড়ে না।” এছাড়া ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, “ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে একটি টিম মাতারবাড়ীতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print