প্রভাতী ডেস্ক: কথায় আছে ভালোবাসার মানুষের জন্য পাড়ি দেওয়া যায় ৭সাগর ১৩ নদী। সুতরাং ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য সবকিছু সম্ভব। এমনকি খুন পর্যন্ত অসম্ভব কিছু না। বরগুনায় দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা এখন সবার মুখে মুখে। স্ত্রী স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এত যুদ্ধ করলো,এর পরেও ব্যর্থ হলো নাকি সেটা অভিনয় ছিল সেই প্রশ্ন অনেকের মুখে।
রিফাত শরীফ হত্যাকান্ড নিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিফাতের পারিবারিক কয়েকটি সূত্র বলছে রিফাতের স্ত্রী মিন্নিই এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। যদি তাই হয় তাহলে গোপনে হত্যা চেষ্টা না করে এভাবে প্রকাশ্যে কেন হত্যা সেটাও অনেকের প্রশ্ন। তবে এর পক্ষে জোরালো কিছু যুক্তি দেখাচ্ছেন রিফাতের বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা। রিফাতের বন্ধু মনজুর তার ফেসবুক আইডির দেওয়া পোস্টে দাবী করেন, “মিন্নী ২নৌকায় পা রেখে চলতে চেয়েছিল। বিয়ের পরেও সে নয়নের সাথে যোগাযোগ রেখেছিল। নয়ন যখন রিফাতকে ১০গ্রাম গাঁজার মমামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠায় তখনো নয়নের সাথে মেলামেশা করে মিন্নী।”
রিফাতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বায়েজিদ তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেটাতে অনেক লোমহর্ষক তথ্য রয়েছে।
বায়েজিদের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য নিন্মে হুবহু তুলে ধরা হলো–
‘‘রিফাত শরীফের ভিডিওটা তে দেশবাসি যা দেখছে সেটাতে রিফাত ভাইয়ের বউ মীন্নি নির্দোষ। কিন্তু ভেতরের খবরটা সবারি অজানা! এই মিন্নি গত ২৬-০৬-১৯ খ্রিঃ সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজে সাথে করে নিয়ে যায় এবং নয়নের সাথে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে নিজের স্বামীকে খুন করে। প্রথমে কলেজের ভিতরে বসে রিফাত শরীফকে ১. নয়ন বন্ড ২. রিফাত ফরাজি ৩. রিশাদ ফরাজি ও অন্যান্য সহযোগীরা লাঠি ও চটপটি ভ্যানের লম্বা চামিচ দিয়ে মারধর করে। তখন মিন্নী দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখতেছিল। মারামারির এক পর্যায় মারতে মারতে রিফাত শরীফকে কলেজ গেটের সামনে নিয়ে যায় এবং চলন্ত রাস্তার মধ্যে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে গুরুতর জখম করে।
তখন মিন্নী স্বামীকে বাঁচানোর যে নাটকটা করেছে সেটার কারনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজটির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পাব্লিসিটি পেয়ে যায়। কিন্তু পাব্লিসিটি দেয়া মানুষ গুলো জানেনা এই মিন্নী নয়নের সাথে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে করেছে। আচ্ছা আপনারা কি খেয়াল করেছেন মিন্নীকে একটা আঘাতও করেনি সন্ত্রাসীরা? কারন এই নয়নের সাথে মিন্নী… ছিল এবং দুজনে এক সাথে ইয়াবা সেবন করত। বলে রাখা ভাল নয়ন বরগুনা জেলার মাদক সিন্ডিকেটর মূল নায়ক যার নামে বরগুনা সদর থানায় কমপক্ষে ২০টা মামলা আছে! কলেজের ভেতরে মারামারি হওয়া আগ মূহুর্তে রিফাত শরীফ মিন্নীকে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে চাইলে মিন্নী বিভিন্ন বাহানায় রিফাত শরীফ কে আটকে রেখেছিল। রিফাত ভাই ঐ সময় যদি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করত তাহলে হয় তো বেঁচে যেত।
হায়রে ভালবাসার মেয়েটা কে ভাই ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। রাস্তার মধ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে যন্ত্রণা সহ্য করেছে। শেষে রক্তাক্ত রিফাত ঘাড় হইতে গলা পর্যন্ত গুরুতর জখম নিয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে যায় এবং মিন্নী বরগুনা সদর হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যায়। পরে রিফাত শরীফকে নিয়ে বড় ভাইয়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে পৌছাবার আগে কান্না ভাঙ্গা গলায় আমাকে ফোন দিয়ে বলে, “ভাই তুই কই জলদি হাসপাতালে যা আমি রিফাত কে নিয়া চলে আসছি।” গত ২৬-০৬-১৯ তারিখে শের-ই-বাংলা মেডিকেল থেকে ময়না তদন্তের শেষ অবদি রিফাত ভাইয়ের সাথে ছিলাম। কিন্তু ঐ মানুষ রুপি ডাইনির বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কোন দেখা পাইনি। সে বাড়িতে বসে মিডিয়ায় বাইট দিছে আর বলছে, “আমি আমার স্বামীকে বাচাতে পারিনি।” চোখ দিয়ে একফোটা পানিও পরেনি যে মানুষটা নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে চলে গেল তার জন্য। একটা মেয়ের কারনে এক নিষ্পাপ ছেলের প্রান গেল। অনেক কষ্টে ০৫ ব্যাগ A+ রক্ত ম্যানেজ করেছিলাম কিন্তু ০১ ব্যাগের বেশি লাগেনি বাকি রক্ত গুলো দেয়ার আগেই ভাইটা মারা গেলো।
অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে হাসপাতালের কেরিং বেডে শোয়ানো অবস্থায় রিফাত ভাই চোখ দুটো দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কোন পলক দিচ্ছিলনা। রক্তে সার্ট-প্যান্ট ভিজে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এইমাত্র রক্তের পুকুরে ডুব দিয়ে এসেছে। স্যালাইন এবং রক্ত চলাকালিন ভাই বারবার ডান হাত আর ডান পা জোড়ে জোড়ে খিচুনি দিচ্ছিল আমি ঐ ডান হাত আর পা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর পুরনো দিনের কথা গুলো ভাবছিলাম। রাতে বাসা থেকে রাগ করে এসে আমার নাম ধরে ঢাকত। দরজা খুলে দিলে বলত, “চলে আসছি থাকব না তোর চাচার বাড়ি।” রিফাত ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হয়েছিল ঈদের দিন।
পেছন থেকে রিফাত ভাই ডেকে বলছিল, “শোন তোর সাথে কথা আছে।” আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কি কথা ভাই?” কি যেন ভেবে বলেছিল, “থাক পরে বলবনে।” যদি জানতাম ঐ কথা টুকুই হবে শেষ কথা তাহলে মনের সব কথা বলে রাখতাম। আমার ভাইটা দিনে-দুপুরে খুন হয়ে গেল কেউ কিচ্ছু বললো না। একটা ডাইনীর চক্রান্তে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ভাই আমার না ফেরার দেশে চলে গেল। অপারেশন থিয়েটারে বসে ঘাড়ে অবস্থিত ব্রেনে ব্লাড সার্কুলেশন কারি ভেইন দুটো জোড়া লাগানো সম্ভব না হলে তাৎক্ষণাত মৃত্যু হয়। পরে আইসিইউতে দিলে হার্টবিট মনিটরে দেখলাম পালসের রেখাটা নিথর হয়ে সোজাসুজি বাম দিক থেকে ডান দিকে চলে যাচ্ছে। এই দুই হাতে রিফাত ভাইয়ের কফিনে বরফ দিয়েছি কফিন কাঁধে নিয়েছি এটাই যদি শেষ পরিনতি হবে জানলে ঐদিন ভাইকে আর যেতে দিতাম না। ভাইয়ে রক্তের দাগ জিন্স প্যান্টে নিয়ে বেচে আছি শুধু ন্যয্য বিচারের আশায়। আমার ভাইয়ের ….দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই। মিন্নী ও খুনির ফাঁসি চাই।’