শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই জিলকদ ১৪৪৬ হিজরি

গোপালগঞ্জের ডাক্তার-নার্সে খালেদার অনাস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গোপালগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকার মানুষের উপর বিএনপি প্রধানের যে ক্ষোভ এবং আস্থাহীনতা রয়েছে সেটার প্রমান মিলে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সের বাড়ী গোপালগঞ্জ কিনা জানতে চাওয়ার মাধ্যমে। দীর্ঘ আট মাস কারাভোগের পর মূমূর্ষ অবস্থায় ৬ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
মাত্র দুই রাত এই হাসপাতালে কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তার ব্যবহারে মনে হয় দু’দিনে জেলখানার বাইরে থেকেই চাঙ্গা হয়ে গেছেন তিনি, ফিরে গেছেন নিজের পুরানো রূপে।তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ায় ওই এলাকার মানুষের ওপর তীব্র ক্ষোভ খালেদা জিয়ার।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত কারো বাড়ি ওই এলাকায় নাকি তা জানতে চেয়ে বিব্রত করে দিচ্ছেন সবাইকে। সবাইকে নাকি তিনি জিজ্ঞেস করছেন ‘তুমি কি গোপালী?’
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে কারাবাসের দুঃসহ স্মৃতি পেছনে ফেলেছেন তিনি।শারিরীকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে অনেক শক্ত। তাঁর গর্জনে প্রকম্পিত হাসপাতালের কম্পাউন্ড।
সাধারণত, হাসপাতালে নার্স-ডাক্তারদের ৮ ঘণ্টা ডিউটি থাকে। খালেদা জিয়া যেহেতু ভিআইপি রোগী এবং দুই বারের প্রধানমন্ত্রী তাই তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তাঁকে ফুলটাইম নার্স দেওয়া হয়েছে। এই ফুলটাইম নার্সরা চক্রাকারে দায়িত্ব পালন করেন, দিনে তিন বার তাঁদের ডিউটি বদলায়। সে হিসেবেই ৬অক্টোবর শনিবারের ডিউটিতে ছিলেন পারুল নামের এক নার্স। সেদিন পারুলকে দেখেই বেগম জিয়ার মনে হয়ত সন্দেহ হয় ।
তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার বাড়ি কোথায়?’ পারুল প্রথমে উত্তর দেননি। বেগম জিয়া এবার ক্ষুব্ধ হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘অ্যাই, তুমি কি গোপালী নাকি?”এবার পারুল উত্তরে বলল, ‘জি না ম্যাডাম। আমার বাড়ি মাদারীপুর।’ খালেদা জিয়া আঁতকে উঠলেন। গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর বা ফরিদপুর এলাকার মানুষদের তিনি বিশ্বাস করেন না। ওই নার্সের কাছ থেকে সেবা নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। শেষ পর্যন্ত ওই নার্সের সঙ্গে আর দেখা হয়নি খালেদার।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠরা জানান,গোপালগঞ্জ ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের উপর খালেদা জিয়ার আজীবনের ক্ষোভ রয়েছে। ওই সব এলাকার মধ্যে কারো বাড়ি জানলেই তিনি ক্ষুব্ধ হন। ধমকা ধমকি করে বলেন, তুমি তো আমাকে মেরে ফেলবে। কারাবাসের ঝক্কিতে মাঝখানে তার এই রাগ কমে গিয়েছিল। কিন্তু মুক্ত আলো-বাতাস গায়ে মেখে খালেদা জিয়া আবার তাঁর পুরনো রূপে ফিরে এসেছেন।

এছাড়া খাওয়া দাওয়া নিয়েও খালেদা জিয়ার বায়নায় বেকায়দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারাগার থেকে খালেদার জন্য যে খাবার এসেছে সে বিষয়ে তিনি তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। কারাবিধি অনুসারে কারাবন্দিদের জন্য থোক টাকা বরাদ্দ থাকে। সেই টাকা থেকে একজন কারাবন্দী যে কোনো জিনিস কিনতে পারেন।
খালেদা জিয়া এখন বায়না ধরেছেন, ওই টাকা দিয়ে তাঁর জন্য হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ থেকে স্যান্ডউইচ, স্যুপসহ অন্যান্য খাবার এনে দিতে হবে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন আবদার পূরণে অসমর্থ। তাই এ বিষয়ে তাঁরা কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

খালেদা জিয়ার কাছে খাওয়া-দাওয়ার তালিকা চেয়েও বিফল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো তালিকা দেননি খালেদা জিয়া। তবে প্রয়োজনীয় কাজগুলো না করলেও সারাক্ষণই তিনি তর্জন-গর্জন করছেন তাঁর চিকিৎসা সেবায় দায়িত্বরতদের ওপর।

কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হওয়া স্বত্বেও ইতিমধ্যে হাসপাতালের কয়েকজনকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘ক্ষমতায় গেলে তোমার চাকরি খাব।’

খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা তো এখনো শুরুই হয়নি। এরই মধ্যে তাঁর তর্জন-গর্জনে ভীত হয়ে পড়েছে হাসপাতালের সবাই।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print