নিজস্ব সংবাদদাতা:বিভিন্ন আন্দোলন -সংগ্রামকে সফল ও নির্বাচনী দাবি আদায়কে মাথায় রেখে অত্যান্ত কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি। নতুন কোনো ইস্যুতে দলটি এখন আর নজর দিতে রাজি নয়। ২১ আগস্টের মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। মামলাটি স্পর্শকাতর হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের এ মামলায় রাজনৈতিক কারণে জড়ানো হয়েছে বলে দাবী করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এ কারণে রায় ‘ফরমায়েশি’ হবে বলে তাঁরা অভিযোগ করে আসছেন।
আগামীকাল ১০ অক্টোবর ২১ আগস্টের মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ২১ আগস্ট বোমা হামলার মামলা নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনীতি করছে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় এ মামলার চার্জশিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় লোক কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। তার আগেই কাহার আকন্দ পুলিশ থেকে অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজও করেছেন তিনি। দলীয় চেতনার তদন্ত কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এই মামলায় তারেক রহমানকে অন্তর্ভূক্ত করা। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তারেক রহমানের নামসহ বিএনপির সিনিয়র আরো কয়েকজন নেতার নাম সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুন তৎকালীন সিআইডির অতিরিক্ত আইজি (বর্তমান আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারীর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় হরকাতুল জিহাদ। মুফতি হান্নান পরিকল্পনাকারী, মাওলানা তাজউদ্দিন গ্রেনেড সরবরাহকারী এবং হামলার পরিকল্পনা হয় ১৯ আগস্ট। জাবেদ পাটোয়ারীর তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও তারেক রহমান বা বিএনপির নাম নেই। অথচ এখন সেই প্রতিবেদনকেও অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, যা দুরভিসন্ধিমূলক।
রিজভী অভিযোগ করেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নানের জবানবন্দীতে তারেক রহমানের নাম ছিল না। শুধু এ মামলায় তারেক রহমানের নাম বলানোর জন্য অন্য মামলায় ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় মুফতি হান্নানকে।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, ২১ আগস্টের রায় বিপক্ষে গেলেও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মনে করে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। সর্বোচ্চ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হতে পারে। খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার যে নির্দেশনা ছিল, এ রায় নেতিবাচক হলে সে ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা রয়েছে বিএনপির।
জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়াসহ সাত দফা দাবিতে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে শাসক দলের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রক্রিয়া দেখেই।
এ লক্ষ্যে দলটি ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আন্দোলন সফল করতে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের বিষয়টিও সর্বশেষ ধাপে রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসজুড়ে সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। তবে দাবি মানার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর। ওই সময় ঢাকায় গণজমায়েতের পাশাপাশি লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর নির্বাচনে অংশ নিলে তার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, কঠোর আন্দোলনের সময় হবে খুবই স্বল্প। সহিংস নয়, অহিংস পথে থেকেই অল্প সময়ে সারা দেশে জনগণের আন্দোলনের উত্থান ঘটিয়ে তারা দাবি আদায় করতে চান। রাজধানী ঢাকায়ও সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন হবে বলে ওই নেতা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনকে এখন বিএনপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। আর বিএনপিকে মামলা-হামলার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। এভাবে বেশি সময় চলতে পারে না। বিএনপিও ৭ দফা দাবিতে মধ্য অক্টোবর থেকে বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ করবে। প্রতিটি সমাবেশে নির্বাচনী আবহ থাকবে। নেতাদের বক্তব্যেও থাকবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে, ক্ষমতাসীনেরা কেন ব্যর্থ আর দেশের স্বার্থে বিএনপিকে কেন ক্ষমতায় দরকার এসব বিষয়।
উশৃঙ্খল কোনো কর্মসূচী দিলে সরকারের পাতানো ফাঁদে পড়বে নেতা কর্মীরা।তাই সব মিলিয়ে নেতা-কর্মীদেরকে কৌশলী হয়ে আন্দোলন -সংগ্রামের নির্দেশ দলীয় হাই কমাণ্ডের।