মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার মাদ্রাসা থেকে ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

এম.জিয়াউল হক: চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অক্সিজেন এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে ১২ বছর বয়সী এক ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার অনাথ আশ্রম এলাকার আনিসুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান নামে ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধারের পর ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। মৃত ছাত্রের পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার শিক্ষকের নির্যাতনের কারণে মৃত্যুর পর শিশুটিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে অভিযোগের মুখে থাকা শিক্ষক মাওলানা তারেক কয়েক দিন আগে ওই শিশুকে মার ধরের কথা স্বীকার করলেও ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলছেন। ছাত্রের পিতা সিএনজি চালক আনিসুর বায়েজিদ বোস্তামী শেরশাহ বাংলাবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম নগরীতে একটি গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত। তার বড় ছেলে মিজানুর রহমান (১৪) ওই মাদ্রাসায় পড়ত। ১৩ মাস আগে সেখানে হাবিবুরকেও ভর্তি করা হয়। অভাব-অনটনের সংসারে দুই ছেলেকে মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে থাকতে পাঠিয়ে কিছুটা নির্ভার হতে চেয়েছিল এই দম্পতি। কিন্তু চার দিন আগে পালিয়ে বাসায় এসে হাবিবুর অভিযোগ করে, মাদ্রাসায় তাকে মারধর করা হচ্ছে। আনিসুর বলেন, ‘চার দিন আগে হাফেজ মাওলানা তারেকুর রহমান আমার ছেলেকে মারধর করেন। নির্যাতনের ভয়ে সে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসে। দুদিন আগে তাকে আবার ফেরত পাঠানো হয়। বুধবার মাগরিবের নামাজের পর হাফেজ তারেকুর ফোন করে আমাকে বলেন, হাবিবুরকে পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বাসায় যায়নি। পরে রাত ৯টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আবু দারদা আমাকে ফোন করে বলেন, হাবিবুর আত্মহত্যা করেছে। সেখানে গিয়ে দেখি গলায় কাপড় বাঁধা অবস্থায় লাশ জানালার সঙ্গে ঝোলানো।’

আনিসুর আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে যদি না পাঠাতাম তাহলে লাশ হতো না।’ তার স্বজন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটা কোনো আত্মহত্যা না। নিযার্তন করে এই ছেলেকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পা মাটির সঙ্গে প্রায় লাগানো অবস্থায় কি কেউ আত্মহত্যা করে?’

অভিযোগের বিষয়ে হাফেজ মাওলানা তারেকুর রহমান বলেন, ‘হাবিবুরকে বুধবার মারধর করা হয়নি। কিন্তু চার দিন আগে হালকা বেত্রাঘাত করেছিলাম। কাল মাগরিবের পর তাকে পাওয়া যায়নি, হয়তো আত্মহত্যা করেছে।’

বায়েজিদ বোস্তামি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে কিশোর ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের পায়ে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। সে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে সেই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মাদ্রাসা কতৃপক্ষ এটিকে আত্মহত্যা বললেও সামান্য সন্দেহ হওয়ায় ময়না তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

এলাকাবাসী জানায়,ওয়াজেদিয়া শহীদুল্লাহ পাড়ায় উমর ফারুক এবং বিদেশী অর্থায়নে গড়ে ওঠা ৬তলা মাদ্রাসা ভবনের ৫ম তলার মসজিদ বিভাগে এ ঘটনা ঘটেছে। এই মাদ্রাসায় দীর্ঘ দিন ধরে নানা অপকর্ম চলছে উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানিয়েছে,এই ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় মাদ্রাসায় ভাংচুর চালিয়ে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ছাত্র ভয়ে মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘হুজুররা মারধর বেশি করেন। একটু আগেও এখানে মারামারি হয়েছে। তাই ভয়ে চলে যাচ্ছি, বাবা নিতে আসছেন।’

ঘটনার বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী জোনের সহকারী কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদার বলেন, ‘বুধবার রাতে মাদ্রাসার ভেতরের মসজিদে এক ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে যায় পুলিশ। পাঁচ তলার জানালায় লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, পা মাটির সঙ্গে প্রায় লাগানো অবস্থায় ছিল। প্রাথমিক তদন্তে জেনেছি, শিশুটি কয়েক দিন আগে মাদ্রাসা থেকে পালানোর পর দুদিন আগে ফিরে আসে। তারপর আবারো নির্যাতন করা হয়েছিল কি না তা আমরা তদন্ত করছি।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print