এম. জিয়াউল হক: ২৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) ৪র্থ বারের মত ১দিন ব্যাপী পোষা পশু-পাখি মেলা ও প্রদর্শনী-২০১৯ অনুষ্টিত হয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বার্ড ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন, এনিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম হাই ফ্লায়ার জোন, অ্যাসোসিয়েশন অব এভিয়ান ভেটেরিনারিয়ান বাংলাদেশ, রেসিফিশ এবং বার্ডস অ্যান্ড পেট এনিম্যাল ক্লিনিকস যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করে। গত ৩ বছর ধরে সিভাসুতে এই মেলা হয়ে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মেলা উদ্বোধন করেন সিভাসুর উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ।
মেলা উদ্বোধনের শুরুতে ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর উপাচার্য ড. গৌতমবুদ্ধ দাশ মেলায় আগত পোষা পশু-পাখির বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন।
এ সময় তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে বিশেষত শিশু, কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাখি কিংবা পোষা প্রাণীর প্রতি সৃষ্ট ভালোবাসা মানুষের মধ্যে নিঃসঙ্গতা থাকলে সেটা দূর করে। বাজে চিন্তা, মাদক আসক্তি থেকে দূরে রাখে। বিদেশে পোষা প্রাণীকে সন্তানতুল্য ধরা হয়। আমাদের দেশেও যেন এই মনোভাব ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন,পোষা পাখি ও প্রাণী পালনকে যারা পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী, তাদের জন্য এ মেলা অনেক সহায়ক হবে। বিশেষ করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। অনেকে পাখি লালন করে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উদ্ধোধনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ ডিন প্রফেসর মো. আবদুল হালিম, রেজিস্ট্রার মির্জা ফারুক ইমাম, বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম পরিচালক প্রফেসর ড. এম সাইফুদ্দীন, পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) প্রফেসর ড. কবিরুল ইসলাম খান, প্রফেসর ড. ভজন চন্দ্র দাস, প্রফেসর ডা. ওমর ফারুক মিয়াজী ও ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় প্রায় ৮০ প্রজাতির পাঁচ শতাধিক পাখি, টার্কি,১০ টি বিরল প্রজাতীর খরগোশ, ১০ প্রজাতির ৪৫টি উন্নত জাতের কুকুর, ৫ প্রজাতির ১৬টি বিড়াল, ১০০ প্রজাতির অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছসহ বিভিন্ন জাতের পোষা প্রাণী প্রদর্শিত হয় প্রায় ৪০টি স্টলে।
প্রদর্শিত পাখিগুলোর মধ্যে বাজরিগার, লাভ বার্ড, কুনোর, লরি, ককাটেল, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, ব্লু হেডেড ম্যাকাও, কেকালিনা কাকাতুয়া, গ্রে-প্যারট, ক্রিমসন, ভেলিট কুনোর, রুবিনো, রোজিলা, মিলি রোজেলা, ক্লু-ক্রাউন কুনোর, রেডলরি ও ক্যাটরিন লরি ছিল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া হল্যান্ড, আমেরিকা, চীন, ভারত, পাকিস্তান থেকে আনা হরেক রকমের কবুতরও এসেছে মেলায়। একটি স্টলে দেখা গেছে ১০টি বিদেশি প্রজাতির পাশাপাশি দেশিয় কবুতর। স্টলের কর্মকর্তারা জানালেন, বিদেশি কবুতরের মধ্যে শেহর, বিউটিহোমা, ক্যাপাচিনো, জগবিন, পেশোয়ারি, পোর্টার, তার্কির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলো ছাড়া আরো রঙ-বেরঙের কবুতরের মধ্যে ছিল হাউজ পিজন, পোমারিয়ান পোটার, ফিন্ডব্যাক, শর্ট ফেস, লং ফেস, হোয়াইট টপ বোখারা, মন্টেনা, ফ্রেঞ্চ মন্ডেইন, মংক কোমরনা, মুক্ষী, সাটিন, পেন্সিল বল, রেন্টি, আর্চ অ্যাঞ্জেল, গ্রিজেল, ব্লু-চেক, কাচুরি, নোল্ডেন, ম্যাগপাই পোর্টার।
এনিম্যাল কেয়ারের স্বেচ্ছাসেবক অয়ন বলেন, পোষা পাখির মেলায় আমরা এর আগেও অংশ নিয়েছি। ভালো লাগছে সবাই আসছে দেখতে। অনেকে লালন করার পদ্ধতি জেনে নিচ্ছে। পোষার পাশাপাশি এটাকে পেশা হিসাবে নিলে অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মনে প্রশান্তি কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বার্ড বিডার্স এসোসিয়েশনের কয়েকটি স্টলে দেখা গেছে, হরেক রকমের বিদেশি পাখির সমাহার। প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি পাখি নিয়ে মেলায় এসেছেন চিটাগং বার্ড বিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন। তাঁর স্টলে থাকা হল্যান্ড থেকে আনা কোকোটো, অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা লরাকিড ও ইক্ল্যাকটাস, গালাকক নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। সাদা রংয়ের মাথায় হলুদ ঝুঁটির কোকোটো দিব্যি বাবা ডাকতে পারে।
জিয়া উদ্দিন জানান, হল্যান্ড থেকে আমদানির পর গত তিনবছর ধরে তিনি পালন করছেন কাকাতুয়া আদলের কোকোটা পাখি। নারী-পুরুষ উভয়লিঙ্গের কোকোটা আছে তার কাছে। লরাকিড পাখি দেখে বোঝার উপায় নেই সেটি নারী নাকি পুরুষ। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লিঙ্গ নির্ধারণ করতে হয়েছে। এক জোড়া লরাকিডের দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
আমাজানের ম্যাকাও নিয়ে মেলায় এসেছেন চট্টগ্রাম বার্ড বিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজ অ্যাডমিন শোয়েব উদ্দিন । তিনি জানান, পুরো চট্টগ্রামে এই পাখি আছে ১৫-১৬টি। এই পাখি গড়ে ৭৫ বছর বাঁচে। চট্টগ্রামে এখনও এই পাখির প্রজনন হয়নি। তবে ঢাকা ও সিলেটে হয়েছে।
মেলায় আনা ম্যাকাওয়ের সম্ভারে সবচেয়ে দামি হচ্ছে স্কারলেট। শোয়েব উদ্দীন জানালেন, এই পাখি ব্রাজিল থেকে আনা হয়েছে। শিশু অবস্থায় প্রতিটি পাখির দাম ৩-৪ লাখ টাকা। প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির দাম ৭-৮ লাখ টাকা। এই পাখি গড়ে ৫০-৬০ বছর বাঁচে।
এছাড়া মেলায় ছিল পশু-পাখির লিঙ্গ নির্ধারণে ডিএনএ টেস্ট, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করে স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারী সংগঠন বাঁধন এবং পশু-পাখির রোগের ঔষুধের স্টল। আর মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে সংকটাপন্ন বন্যপাখি শিকার না করার আহ্বানসম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন।
বার্ড ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের সদস্য সানজিয়া শাবনাম বলেন, তাদের সংগঠন সম্পূর্ণ অলাভ জনক সংগঠন। সংগঠনের সকল সদস্য খুবই আন্তরিক, যারা নতুন করে পশু -পাখি পালন করে তাদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে সহযোগীতা সিনিয়র সদস্যরা। মেলায় হরেক রকমের বিরল প্রজাতির এত গুলো পশু-পাখি দেখে খুব ভালো লাগছে বলেও জানান তিনি।
ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের অন্য এক সদস্য তাওহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের সংগঠনের কারণে অনেক লোক উপকৃত হয়। বিশেষ করে তাদের গ্রুপ থেকে পশু-পাখি কিনে কেউ ঠকে না। মার্কেট থেকে কিনলে পশু-পাখি অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া তাদের সংগঠন সাধ্যমত সমাজ সেবায় কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।