
ঢাকা প্রতিনিধি: কড়া নিরাপত্তায় শনিবার বিকালে নাজিম উদ্দীন রোডের কারাগার থেকে পিজি হাসপাতালে আনা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে।
নতুন করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত আগের ব্যবস্থাপত্রেই চিকিৎসা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। বেগম জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র রোববার পরীক্ষা করে মেডিকেল বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পিজির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ-আল হারুণ বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখানে ভর্তি আছেন। মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী গতকাল উনাকে দেখেছেন। আজকে পাঁচ সদস্যের বোর্ড সদস্যরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টায় সেখানে গিয়েছিলেন এবং উনার সমস্ত চিকিৎসার কাগজপত্র দেখেছেন।উনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উনার চিকিৎসা বোর্ড পুনরায় না বসা পর্যন্ত আগে যে চিকিৎসাগুলো চলছিল সেগুলোই চলবে। সুবিধাজনক সময়ে উনার শরীরের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আবার করা হবে। বোর্ড হয়ত সোমবার আবার বেগম খালেদা জিয়াকে দেখবেন।হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ-আল হারুণ বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বরিশাল গিয়েছেন একটা জরুরি কাজে। উনি আসবেন ৯ অক্টোবর। উনার স্থলে অধ্যাপিকা তানজিনা পারভীনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনও মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে ছিলেন জানিয়ে পরিচালক বলেন, বোর্ডের সদস্যরা কাগজপত্র দেখার সময় তার সাথে কথাও বলেছেন।
খালেদা জিয়াকে ভর্তির পর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের কথা জানান।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জলিল চৌধুরী কেবিনে গিয়ে তাঁকে দেখেও আসেন।
পূর্বের মেডিকেল বোর্ড নিয়ে বিএনপির আপত্তির পর পুনর্গঠিত মেডিকেল বোর্ডে অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী এবং ডা. বদরুন্নেসা আহমেদকে রেখে আগের তিনজকে বাদ দিয়ে নতুন নেওয়া হয়েছে অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী ও অধ্যাপক নকুল কুমার দত্তকে।
এই মেডিকেল বোর্ড নিয়েও বিএনপি সমর্থক চিকিৎসক নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন আপত্তি তুলে বলেছেন, মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা মানা হয়নি।
হাই কোর্টের নির্দেশনায় বলা ছিল, নতুন তিনজনের কেউ সরকার সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সমর্থক হতে পারবেন না।
কিন্তু চিকিৎসক সজল কৃষ্ণ ও নকুল কুমার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের ‘লাইভ মেম্বার’ বলে দাবি জেড এম জাহিদের।এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আদালতের নির্দেশনার উল্লেখ করে বলেন, “কোর্টের শর্ট আদেশে যেটা সামারি আছে সেটার ৪ নম্বর প্যারায় একদম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, এই বোর্ডে প্রফেসর আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বদরুন্নেসা আহমেদ এই দুইজন বাদ দিয়ে বাকী তিন সদস্য এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে তারা যেন ড্যাব ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য না হন। যদি সাপোর্টার অথবা নিয়ার মেম্বার হন কোনো অসুবিধা নাই।
“আমাদের কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সেইভাবে মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডে যারা আছেন তারা কেউই স্বাচিপ বা ড্যাবের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নন।”
খালেদা জিয়া কোনো চিকিৎসক চেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “না এখনো কোনো ডিমান্ড দেননি। ডিমান্ড দিলে আদালতের আদেশে যেটা বলা আছে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নেব।”
কায়সার কামালের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মওদুদ আহমদ, এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নাল আবেদীনসহ একটি প্রতিনিধিদল হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে বিএনপিপ্রধানের চিকিৎসা যেন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়। একই সঙ্গে পুনর্গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দুই সদস্যের বিষয়ে তাদের আপত্তির কথাও জানান।
পরে মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনার অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠন করা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পরিচালককে বলেছি। এটা না হলে আমরা আবার আদালতে যাব।