Search

মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

কয়েকদিন আগেই ঘাতক লিমনের হুমকির কারণে জিডি

রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে ছেলেকে হত্যা: বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে ‘পরকীয়া’ সম্পর্কের দাবি ঘাতক লিমনের

ঘটনার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে লিমন

রাজশাহীতে বিচারকের ছেলে হত্যার নেপথ্যে পরকীয়া সম্পর্কের তথ্য দিয়েছেন ঘাতক লিমন মিয়া (৩৫)। তিনি দাবি করেছেন, বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে তার পাঁচ বছরের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। আর সেই সম্পর্ক ঘিরে তৈরি হওয়া বিরোধ থেকেই ঘটে এই হত্যাকাণ্ড। তবে হত্যার কয়েকদিন আগেই ঘাতক লিমনের হুমকিতে সপরিবারে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুর রহমানের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি।

গত ৬ নভেম্বর তিনি সিলেটের সুরমা থানায় দাখিল করা জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে লিমন মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয়। লিমন দরিদ্র হওয়ায় তাকে আর্থিক সহায়তা করতেন। এখন টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই লিমন তাকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। গত ৩ নভেম্বর তাকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দেন লিমন।

জিডির ঠিক ছয়দিন পর বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহীতে ভাড়া ফ্ল্যাটে লিমনের হাতে খুন হয় বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমন (১৫)। সুমন সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ঘটনার সময় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি ও ঘাতক লিমন মিয়া। লুসিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার সময় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে লিমন পুলিশের সামনে সাংবাদিকদের অকপটে ঘটনার বর্ণনা দেন।

লিমন দাবি করে বলেন, ‘বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের পরকীয়ার সম্পর্ক। শুরুতে পরকীয়া করতে আমি রাজি ছিলাম না। আমি বলেছিলাম, পরকীয়া করবো না। আমাকে পছন্দ করলে সরাসরি বিয়ে করেন। উনি জোর করে আমার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক করেছেন। আমার মূল এনআইডি কার্ডও নিয়ে রেখেছেন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কার্ডও তার কাছে আছে। ওনার বাসায় আগে থেকেই যাওয়া-আসা আমার। কিন্তু সম্প্রতি লুসি প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করছেন। লুসি তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছেন।’

হাসপাতালে স্ট্রেচারে শুয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তার (তাসমিন নাহার লুসি) সঙ্গে কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই আমি এ বাসায় দেখা করতে এসেছিলাম। আমি বলেছিলাম, যেন আমার সঙ্গে এক মিনিট করে হলেও কথা বলেন। এরপর আমাকে আস্তে আস্তে ভুলে যাইয়েন। আমি থাকতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখা করতে গিয়ে ওনাকে গোলাপ ফুল দিই। ওনার জন্য পপকর্ন নিয়ে আসি। বাদাম নিয়ে আসি। খেয়ে ওনাকে আমি বলি চলো যাই। যখন সে যাচ্ছে না, তখন আমি ফল কাটার চাকু দিয়ে তার হাতে মারি। তখন আটক করে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য চাইছিল। এসময় ওনার ছেলে আমাকে বাধা দেয়। তখন ছেলের পায়ে কামড় দিয়েছি। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। আমি এটার সঠিক বিচার চাই।’

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর ডাবতলা এলাকা পার্ক ভিউ নামে একটি ভবনের ভাড়া ফ্ল্যাটে ঢুকে সুমনকে হত্যা করেন লিমন মিয়া। তবে এ ঘটনার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা ওই লিমন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। আটক লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি এলাকায়।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, হামলাকারী যুবকও বিচারক পরিবারের পূর্বপরিচিত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লিমন বিচারকের বাসায় প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে হামলা চালান। ধারালো অস্ত্রের কোপে তাওসিফ রহমান সুমন গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় বিচারকের ছেলে ও স্ত্রী তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঘটনা সময় বিচারক আবদুর রহমান বাসায় ছিলেন না। খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে যান।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, ‘হত্যার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিকভাবে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print