
পলিথিন-প্লাস্টিক জনজীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে। নিজের সন্তানের জন্য পলিথিন বন্ধ করতে হবে। বিকল্প হিসেবে চটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে পলিথিনবিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আমরা নিয়মিত কাঁচাবাজারে যাচ্ছি। হাতে তিনটি ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছি। একটি কাগজের ব্যাগ, একটি কাপড়ের, আরেকটি চটের। এগুলো দেখিয়ে আমরা সবাইকে বলছি যে, আপনারা এই ব্যাগগুলোই শুধু ব্যবহার করবেন। এগুলো দেখানো কিন্তু আমাদের শেষ। এবার আমাদের কড়া রাস্তায় যেতে হবে।’
‘হয়তো অনেকেই আমার সমালোচনা করবেন যে, উনি পলিথিন বন্ধ করবেন বলেছিলেন, কিন্তু পারেননি। আমি না হয় পারিনি, প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কী করছেন? আপনার শিশুটার মায়ের দুধে তো পলিথিন ঢুকে যাচ্ছে, আপনার সন্তানের মগজে তো পলিথিন ঢুকে যাচ্ছে।’
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু ২০২৫ সালে এসেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। যদি জনগণ তাদের আচরণ পরিবর্তন না করে তবে সরকার একা এই যুদ্ধ জিততে পারবে না। পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যবহারের মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের খাবার এবং পানিতে প্রবেশ করে। এটি ক্যানসারসহ গুরুতর রোগ সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিকের এই মাইক্রোপার্টিকেলগুলো শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করছে যা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। একজন মা কিংবা বাবা হিসেবে এ ধরনের বিষাক্ত অভ্যাস বন্ধ করা জরুরি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পলিথিনের বিকল্প সবসময়ই ছিল, কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করতে আমাদের অভ্যাসগত অনীহা রয়েছে। আপনার দাদা বা বাবা বাজারে গেলে চটের ব্যাগ নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন গাজরের জন্য এক ব্যাগ, মরিচের জন্য আরেক ব্যাগ, এভাবেই পলিথিনের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে।
শুধু পলিথিন নয়, শব্দ দূষণ এবং পাহাড় কাটার বিষয়েও তিনি কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে মালিকদের তালিকা তৈরি করে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে জনগণ ও সরকারি কর্মকর্তাদের একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রায় ৫০ হাজার ময়লার বিন সরবরাহ করছে। প্রতিটি বাজার ও দোকানে এগুলো স্থাপন করা হবে যাতে ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়। দোকানদাররা নিয়ম মানতে ব্যর্থ হলে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও হালদা নদী গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া প্রমুখ।