
আসন্ন চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারকে ব্যবসায়ীবান্ধব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম নুরুল হক। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারকে এমন একটি ব্যবসায়ী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যেখানে থাকবে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা। আগে চট্টগ্রাম চেম্বারে কোন ব্যবসায়ী কথা বলার সুযোগ পেতেন না। তাদের মতামতের কোন দাম দেওয়া হতো না। সেই প্রথা আর চট্টগ্রাম চেম্বারে চলতে দেওয়া হবে না।
সোমবার(২৭ অক্টোবর) নগরীর পাঁচলাইশের কিং অফ চিটাগাংয়ে আয়োজিত সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে নুরুল হক আরও বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঐক্যই হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনর্জাগরণের ভিত্তি। ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরি, ভ্যাট-ট্যাক্স নীতিতে স্বচ্ছতা ও বন্দরনির্ভর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করবো।
সভায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সাথে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ১৮ প্রার্থীর পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- এসোসিয়েট গ্রুপের মধ্যে প্যানেল লিডার এস এম নুরুল হক, মো. কামরুল হুদা, মোহাম্মদ আইয়ুব, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, এস এম কামাল উদ্দিন। এছাড়া অর্ডিনারি গ্রুপের মধ্যে ছিলেন- জসিম উদ্দিন চৌধুরী, এটিএম রেজাউল করিম, আহমেদ রশিদ আমু, আহমেদ-উল আলম চৌধুরী (রাসেল), ইমাদ এরশাদ, কাজী ইমরান এম
রহমান, মো. আবচার হোসেন, মো. আরিফ হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, মোহাম্মদ আজিজুল হক, মোহাম্মদ রাশেদ আলী, মোহাম্মদ মুছা।
সভাপতির বক্তব্যে শাজাহান মহিউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যের হৃদপিণ্ড। এখানে শিল্প, বন্দর, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ খাতের উন্নয়ন দ্রুততর করতে পারলে জাতীয় অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।
বিশেষ আলোচক ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস এম ফজলুল হক বলেন, চট্টগ্রামই দেশের রাজস্ব আয়ের মূল কেন্দ্র। অথচ এখানকার অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে যথাযথ বিনিয়োগ নেই। বন্দর, শিল্পাঞ্চল ও রপ্তানি কার্যক্রমে যে আয় হয়, তার একটি অংশ চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়া উচিত।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন, টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন, খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতি, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, তামাকুমন্ডি লেন ব্যবসায়ী সমিতি, বৃহত্তর চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতি, জুবিলি রোড ব্যবসায়ী সমিতি, রিয়াজুদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
ব্যবসায়ীরা আক্ষেপ করে বলেন, চট্টগ্রামে এখন আর ব্যবসায়িক পরিবেশ নেই। ব্যবসা না চললে দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরও টিকবে না। অথচ প্রতিনিয়ত ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, অতীতে যারা চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্বে ছিলেন, তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়, নিজেদের স্বার্থে কাজ করেছেন। চেম্বারকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এবার সেই ধারার অবসান ঘটাতে হবে।
ব্যবসায়ীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এবার কেউ যেন কোটা বা গোষ্ঠীগত সুবিধা নিয়ে নেতৃত্বে আসতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ চেম্বারের সদস্যরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
চট্টগ্রামকে প্রকৃত বাণিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, ভোটে বিজয়ী হলে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদায় ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকেই।
চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে হলেও এর লভ্যাংশ থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কোন লেভি পাওয়া যায় না। এটি চট্টগ্রামের প্রতি এক ধরনের অবিচার।
তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ওজন স্কেল। এর পাশাপাশি সড়কে নিরাপত্তাহীনতা, পণ্যচুরি ও পুলিশের অবহেলা ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও কঠিন করে তুলেছে। গাড়ি থেকে মালামাল চুরি হলে মামলা হয় না, বরং উল্টো ব্যবসায়ীকেই অভিযুক্ত করা হয়। ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিনির্ভর চেম্বার গঠনের অঙ্গীকার করে বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সেবা চালু করা হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটা সেন্টার গড়ে তোলা হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা সহজে তথ্য যাচাই ও আধুনিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারকে বিশ্বমানের সংগঠনে রূপ দিতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হবে। সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে, যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়। তারা গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রামের বিপুল ট্যুরিজম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চেম্বারের অধীনে একটি রিসার্চ সেল গঠন করা জরুরি। এই সেল ব্যবসা, বিনিয়োগ, পর্যটন ও শিল্পখাতে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করবে।
ব্যবসায়ীরা দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বারকে পকেট কমিটি বা ক্লাব নয়, বরং ব্যবসায়ীদের প্রকৃত সংগঠনে পরিণত করতে হবে। যেখানে সবাই সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব ও সম্মান পাবে।









