Search

মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

মুখ দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে রাব্বি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় একজন বিশেষ শিক্ষার্থী পরিলক্ষিত হয়েছে। দুর্ঘটনায় দু’হাত হারানো ভাটিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী এবারের প্রাথমিক সমাপনীতে মুখ দিয়ে লিখেই পরীক্ষা দিচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মানসিক শক্তি হারায়নি সে। এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক গাজী হুমায়ুন কবির বলেন, সবাই হাত দিয়ে যেভাবে লেখে সেভাবে রফিকুল ইসলাম রাব্বিও মুখ দিয়ে লিখতে পারে। এটাই তার মানসিক দৃঢ়তার বড় প্রমাণ। দু’হাত হারানোর পরেও সে ইচ্ছে শক্তি হারায়নি। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে স্কুলের সবাই তাকে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া অসুস্থ থাকা অবস্থায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহ অনেকেই তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।’ মডেল টেস্টে রাব্বি যেমন ভালো ফলাফল করেছে, তেমনি ফাইনাল পরীক্ষায়ও সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জানা যায়, ভাটিয়ারি ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও রোজি আক্তারের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে রাব্বি সবার বড়। রাব্বিও সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর এক দুর্ঘটনায় তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। প্রতিদিনের মত ওই দিনও অন্য ছাত্রদের সাথে বিদ্যালয়ে গিয়েছিল রাব্বি। স্কুলের কাছেই ভাটিয়ারি বাজারে রয়েছে একটি ফুট ওভারব্রিজ। সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে মিস্ত্রিরা সুইচ বন্ধ না করে দুপুরে ভাত খেতে যায়। ওই সময় হেঁটে ব্রিজ পার হতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে আহত হয় রাব্বি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় বিজয় স্মরণী কলেজের ছাত্র রাশেদসহ কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বার্ন ইউনিটে একমাস ১৯ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলেও চিরদিনের জন্য হারাতে হয় তার দুই হাত। তার মা-বাবা দু’জনই দিনমজুর। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

রাব্বির মা রোজি বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু হঠাৎ দুর্ঘটনায় সে দু’হাত হারিয়ে ফেলায় আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। তবে রাব্বি মনোবল হারায়নি। সুস্থ হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। তার এই আগ্রহের কারণে অনেকেই তাকে সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। ‘

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বাহার উদ্দিন রাব্বিকে মুখ দিয়ে লেখার পদ্ধতি শেখান এবং এ বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেন। মূলত তাঁর প্রচেষ্টায় নতুন করে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে রাব্বি।

এত প্রতিবন্ধকতার পরেও পুনরায় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারায় উচ্ছ্বসিত রফিকুল ইসলাম রাব্বি। আলাপকালে সে জানায়, দু’হাত হারানোর পর আর পড়াশোনা করতে পারবে না ভেবে তার মনটা ভীষণ খারাপ থাকত। পরে চবি শিক্ষার্থী রায়হানের সহযোগিতায় সে মুখে লেখার পদ্ধতি শেখে। ফলে সে আবার পড়া লেখা শুরু করে।

রাব্বি আরো জানায়, ওই দুর্ঘটনা না ঘটলে সে এতদিনে ৭ম শ্রেণিতে পড়ত। কিন্তু এখন ছোট বোন রুকাইয়া আক্তার রওজার সাথে ৫ম শ্রেণিতে পড়তে হচ্ছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print