প্রভাতী ডেস্ক:প্লাস্টিকের ক্ষতিকর পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার পরে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পঁচনশীল পাটের পলিথিন বা সোনালি ব্যাগের আবিষ্কার করেছিলেন আনবিক গবেষণা শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মোবারক আহম্মেদ খান।
বহুল ব্যবহৃত পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাটের পলিথিনের প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানী মোবারক।
পাটের পঁচনশীল পলিথিন উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই আণবিক বিজ্ঞানী।
এক বছর আগে সেই পলিথিন দিয়ে ব্যাগ তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন হলেও প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যাচ্ছে সরকার। এই জন্য যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে ২ অক্টোবর।
সচিবালয়ে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, “একদিন ড. মোবারক সাহেব একটা পলিথিনের ব্যাগ বের করে নিয়ে এসে আমাদের প্রদর্শন করান যে, এটা আমি আবিষ্কার করেছি। আমি বললাম, এটা তো নতুন কিছু না। এটা তো ট্রাডিশনাল, যে পলিথিন সেটাই। তিনি বললেন, না, এটা ট্রেডিশনাল পলিথিন না, এটা আমি পাট থেকে করেছি। এটা পঁচনশীল এবং পরিবেশবান্ধব।
বিস্ময় নিয়ে আমি বলি, পরিবেশবান্ধব হলে আগুন লাগলে পুড়ে যাওয়ার কথা। উনি বললেন টেস্ট করে দেখেন। দেখলাম,এই রুমেই। পরে তার পলিথিন ব্যাগটা পুড়ে গেল,ছাই হয়ে গেল!
এরপর থেকেই শুরু পাটের পলিথিন ব্যাগের হাঁটি হাঁটি, পা পা যাত্রা।”
ড. মোবারক বলেন, এটা পরিবেশবান্ধব। এটাকে আমি পুনরায় ব্যবহার করতে পারবো। পুনরায় ব্যবহার করলে সেলুলোজ ও অন্য প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না। শুধু ব্যবহৃত ব্যাগগুলো এনে পানিতে ডোবালে আগের মতো তৈরি করতে পারবো। সেক্ষেত্রে দাম অনেক কম চলে আসবে।
ব্যাগের দাম ২-৩ টাকা পড়লেও খুবই কম। রিসাইকেল করলে দাম একেবারেই কমে আসবে। ‘র’ পাটের পাশাপাশি পাটের বস্তা এমনকি ব্যাগও ব্যবহার করতে পারবো। দেখতে কালো হয়ে গেছে,কোন ব্যাপার না। ভিতরে যে সেলুলোজ সেটা রয়ে গেছে। সেটা উদ্ধার করতে পারলেও ফেলে দেওয়া পাট থেকেই, তখন দাম অনেক কম চলে আসবে।”
শুরুর দিকের কথা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, তখন উনি আণবিক শক্তি কমিশনের ডিরেক্টর (ডিজি) ছিলেন, উনার চাকরির মেয়াদকাল শেষ প্রান্তে। সেদিনই আমরা বলি যেদিন চাকরি থেকে অবসর নেবেন, সেদিন থেকে আপনার আরেকটি চাকরি রেডি। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) অ্যাডভাইজর হিসেবে থাকবেন এবং আপনার গবেষণার ফসল নিয়ে যেন দেশ-জাতি উপকৃত হতে পারে সেজন্য আমরা একসঙ্গে চেষ্টা করবো।
ফুটামুরা কাঠ থেকে সেলুলোজ করে পচনশীল পণ্য তৈরি করে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা করছি পাট থেকে। তারা পাট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। মেশিনারিজ ডিজাইন ও প্রস্তুত করবেন এবং বাংলাদেশে স্থাপন করবেন। তারা কমার্শিয়াল দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন। তারা বিনিয়োগের জন্যও রাজি।
পলিথিনের বিকল্প যে পণ্য সেটার চাহিদা সারাবিশ্বে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন পিস পলিথিন সারাবিশ্বে ব্যবহৃত হয়। আমাদের এখানে উৎপাদিত পাট দিয়ে শুধু পলিথিন তৈরি করলে মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারবো।
পাটের এই পলিথিন নিতে প্রতিদিন প্রাইভেট কোম্পানি এসে মন্ত্রণালয়ে ধর্না দেয় উল্লেখ করে পাট প্রতিমন্ত্রী জানান, বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ হবে। আর এর চাহিদা সারাবিশ্বেও। গোল্ডেন ফাইবার থেকে গোল্ডেন বারে পরিণত হবে। যে চার কোটি মানুষ পাটের সঙ্গে জড়িত সবার ভাগ্য পরিবর্তন হবে।
পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপে পলিথিন বন্ধ। আমরা উৎপাদন করলে বিশ্বে চাহিদা তৈরি হবে। আমরাই একমাত্র উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ হবো।
উদ্ভাবক মোবারক বলেন, আমি মনে করি, দিস ইস দ্য অনলি প্রোডাক্ট। বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড করতে অল ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড, এই একটি প্রোডাক্ট যথেষ্ট যদি আমরা সাকসেসফুল করতে পারি।
মোবারক আরও জানান, আমেরিকার মতো দেশের একটি বিশাল কোম্পানী এমন চিঠি লিখেছে আমার কাছে, তারা লিখেছে তুমি এটা উদ্ভাবন করছো। কী করলে আমরা এটা পেতে পারি?
তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রীকেও পাঠিয়েছে কপিটা। ওরা প্রাইম মিনিস্টারের কাছেও পাঠিয়েছে। সেটা এখন উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে।
‘আজকে আমি অত্যন্ত খুশি, আমার ব্রেইন চাইল্ড এটা, আজকে একটা পর্যায়ে এসেছে।’