সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

সরকারি কর্মকর্তাদের করোনাকাল ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে

লকডাউন কাকে বলে, কিভাবে তা প্রয়োগ করতে হয়, জানতে এবার সত্যি সত্যি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাদের মনে হয় বিদেশ পাঠানোর প্রয়োজন পড়েছে। পুকুর খনন করা শিখতে বা আজগুবি আরো অনেক কারণে তাদের বিদেশ যাওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে হাস্যরস ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্যঙ্গ কৌতুক কম হয়নি। বাতিল হয়েছে সেইসব যাত্রা। এবার জনগণ নিজেরাই জোর করে কর্তাদের উড়োজাহাজে তুলে দেবে। সরকার না চাইলেও নিজেরাই হয়তো চাঁদা তুলে খরচের ব্যবস্থা করবে। কারণ করোনার এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও লকডাউনের প্রকৃতচিত্র থেকে জনগণ শুধু বঞ্চিতই হচ্ছে। প্রথম ঢেউ, দ্বিতীয় ঢেউ জীবন দিয়ে মোকাবিলা করেও খাঁটি লকডাউন দেখার সাধ মিটলো না।

সাধারণ ছুটির পর এলো নিষেধাজ্ঞা তারপর লকডাউন। সব বন্ধ এমন ধারণা ছিল লকডাউন সম্পর্কে, কিন্তু দেখা গেল ‘ওপেন আপ’কেই স্থানীয় ভাবে মনে হয় আমরা লকডাউন ভাবছি। শুরু থেকেই দেখে আসছি যে মন্ত্রীর করোনার স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলা উচিত, দিক নির্দেশনা দেয়া উচিত, তিনি দিচ্ছেন না বা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। দিচ্ছেন বিপরীত এক বা একাধিক জন। বিপণী বিতান খোলা রাখা বা গণপরিবহন চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশ দেবেন, সেই মতো নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন হবার কথা। কিন্তু দেখা গেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও মন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা অনেক সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানেন না। কমিটির সমন্বয়ক জানেন না বৈঠক হচ্ছে কি হচ্ছে না। এমন এক খোলামেলা সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের করোনাকাল।

ঈদে মানুষ শহর ছাড়বেই। করোনাকালের দুই ঈদে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা উঁচুতলার মানুষদের আটকানোর চেষ্টা না করে, কাছা বেঁধে নেমে পড়ি গরিব ঠেকাতে। কিন্তু সেই কাছা বাঁধাটাও ছিল অভিনয়। কাজের কাজ হবার মতো কোন নকশা ছিলো না। ঈদের আগেই রোজা চলাকালীন লকডাউনে রাজধানী জুড়ে ছিল যানজট। মহাসড়কের গণপরিবহন আঁধারে যাত্রী বহন করেছে। লকডাউন রেখেই খুলে দেওয়া হয়েছে বিপণী বিতান । একে তামাশা ছাড়া আর কি বলা যায়? মানুষকে ঘরে থাকতে বলে সব উন্মুক্ত করা হলো । এভাবে আমরা লকডাউনের সংজ্ঞাটাই ভুলে গেছি । সংশয়েও আছি -আমরা যেটা দেখছি এটাই সত্যিকারের লোকডাউন? বিদেশেরটা তবে অন্য কিছু? এই সংশয় কাটাতে কর্তাদের বিদেশ যেতেই হবে। না হলে ভুল লকডাউনের ফাঁদে পড়ে করোনার একের পর এক ঢেউতে আমরা বিপর্যস্ত হতেই থাকবো। অগোছালো থাকবে সরকারি বেসরকারি অফিসের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে ধনী গরিব সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ অর্থনৈতিক মন্দা চক্রে পড়ে যাবে । ফলাফল- আমরা জীবন- জীবিকা দুই’ই হারিয়ে বসতে পারি। তাই লকডাউন কাকে বলে এবং উদাহরণসহ আমরা সেটি জানতে ও বুঝতে চাই।

লকডাউনের যদি এমন লীলাখেলাই চলতে থাকে, তাহলে করোনাকাল জুড়ে একমাত্র লকডাউনে থাকা বিদ্যায়তন বা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বিদ্যায়তন ছাড়া সর্বত্রই । তবে কেন তাদের শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হবে? কলেজের উঠোনে পা না রেখে একটি ব্যাচ কলেজ জীবনই শেষ করে ফেললো। কলেজ নিয়ে তাদের ব্যক্তি জীবনে কোন অভিজ্ঞতাই যোগ হলো না । স্কুলে যাদের শিশু বা প্রথম শ্রেণির মাধ্যমে প্রবেশের কথা ছিল, তারা সেই সুযোগটি পায়নি। উচ্চ শিক্ষার ভর্তি প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে । এমন বিলম্ব প্রায় সব খাতে, সকলের ব্যক্তি জীবনকে প্রভাবিত করছে। কিন্তু করোনা সহসা ছেড়ে যাচ্ছে না আমাদের। তাই লকডাউনে সীমিত জীবন ব্যবস্থা, লকডাউন মুক্ত। সীমিত যাপন, এসব কিছুরই একটি জাতীয় পরিকল্পনা করা উচিত। তড়িঘড়ি করে নয়। সময় নিয়েই কাজটি করতে হবে। এবং পরিকল্পনাটি অবশ্যই হওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে। অন্যরা তাদের সহযোগিতা করবে মাত্র। এই যে প্রত্যাশা করলাম- এটি পূরণ হবার জন্য যে সমন্বয় প্রয়োজন, সেটুকুও আমরা হবার সক্ষমতা অর্জন করেছি কিনা সন্দেহ আছে। তাই শুরু থেকেই বলে আসছি, তামাশা নয় সত্যি বলছি, আমাদের মনে হয় করোনাকাল ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে!

লেখক-তুষার আবদুল্লাহ
গণমাধ্যমকর্মী

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print