Search

সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১লা রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

৩০০ কোটি টাকা পাওনা দাবি: চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা

প্রভাতী ডেস্ক : চট্টগ্রামের একজন গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে ব্যাংক এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করা এ মামলায় অডিটর নিয়োগের মাধ্যমে তার পাওনার বিষয় নিষ্পত্তির আবেদন জানানো হয়েছে।

আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে কেন অডিটর নিয়োগ দেয়া হবে না- এ মর্মে জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৬শে নভেম্বর) এ মামলায় শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন লিবার্টি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইলিয়াছ। আগ্রাবাদের আইয়ুব ট্রেড সেন্টারে রয়েছে তার মালিকানাধীন বিভিন্ন কনসার্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস। প্রতি বছরে গড়ে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ট্যাক্স দেন তিনি।

ব্যাংকে লোকাল এলসির খোলার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রেতা তার (ইলিয়াছের) কাছ থেকে এক্সেসরিজ কিনেন। এলসি ওপেনিং ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত সময়ে পেমেন্ট দেননি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা ক্রেতা।

অথচ সেই টাকার সুদ ও জরিমানা ইলিয়াছের হিসাব থেকে কেটে নেয়া হয়েছে। একজনের কাছে পাওনা টাকা আরেকজনের কাছ থেকে কেটে নিয়ে বা অ্যাডজাস্ট করে উল্টো অনেক ব্যাংক ইলিয়াছকেই খেলাপি বানিয়ে বিভিন্ন সময়ে মামলা-মোকদ্দমা করে।

সূত্র জানায়, এ অবস্থায় অন্যায়ভাবে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের এলসি পেমেন্ট ডিলে বা ওভার ডিউজ হওয়ার বিপরীতে কোটি কোটি টাকা সুদ ও জরিমানা আদায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করেন মোহাম্মদ ইলিয়াছ। কেটে নেয়া টাকা ফেরত চান। এতে কাজ না হওয়ায় তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন।

রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোহাম্মদ ইলিয়াছকে কোন ব্যাংক কোন এলসির বিপরীতে কত টাকা কেটে রেখেছে বা সুদ ও জরিমানা আদায় করেছে তার লিখিত বিবরণ দিতে চিঠি দেয়। কিন্তু ইলিয়াছের বক্তব্য হচ্ছে; যেসব ব্যাংকে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য পেতে এলসি খোলা হয়েছে এবং কোন এলসির পেমেন্ট কতদিন দেরিতে দেয়া হয়েছে, কত টাকা সুদ বা জরিমানা আদায় করা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সফটওয়্যারে বা মডিউলেই সংরক্ষিত আছে।

১০ বছরে যদি ৩০ হাজার এলসি হয় সমপরিমাণ এলসির বিপরীতে ৩০ হাজার চিঠি দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই তিনি অডিটর নিয়োগের মাধ্যমে পাওনা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে যান। হাইকোর্ট তাকে নিম্ন আদালতে যাওয়ার আদেশ দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত চট্টগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ২০১৯ সালে এসব মামলা- আদার ক্লাস স্যুট নম্বর : ৪০৬, ৪০৭ ও ৪০৮ দায়ের করেন তিনি ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এসব মামলায় যেসব ব্যাংককে বিবাদী করা হয়েছে সেসব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে শোকজ করেন আদালত।

হিসাব নিষ্পত্তিতে কেন অডিটর নিয়োগ করা হবে না- সে মর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিল বা সাক্ষী হাজিরের জন্য বলা হয়। আজ বৃহস্পতিবার ওই সব মামলায় শোকজের জবাব প্রদান ও শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ইলিয়াছ যুগান্তরকে বলেন, একজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা আরেকজনের কাছ থেকে কেটে নেয়া, লোকাল এলসির বিপরীতে ডলারে যেসব পেমেন্ট হয় সেই পেমেন্টের ক্ষেত্রে ডলার বেচাকেনার ব্যবসা করা, ‘এক্সেস গেইনের’ নামে গলাকাটা টাকা আদায় করাসহ ব্যাংকের নানা জটিল সমীকরণে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। ২০ কোটি টাকার পুঁজির ব্যাংক ২০ বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছে এভাবে। অথচ সাধারণ ব্যবসায়ী যারা সরকারকে ট্যাক্স ভ্যাট দিয়ে আয়কর দিয়ে ব্যবসা করছে, দেশে মিল-কারখানা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে তাদের অনেকেই হয়ে যাচ্ছেন পুঁজিশূন্য। ব্যাংকের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে। ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই তিনি এ মামলা করেছেন বলে জানান। তিনি ব্যাংক এশিয়ার একটি ঋণের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ৪৭ কোটি টাকার ঋণ তিন বছরে ১২০ কোটি টাকা হয়েছে। এজন্য ব্যাংক তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

তিনি আরো বলেন, যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি ব্যাংক শত কোটি টাকার ব্যবসা করেছে সেই একই ব্যাংক মাত্র ২০ কোটি টাকার জন্য একই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে মাইকিং করার মতো ঘটনাও ঘটছে। এগুলোর অবসান হওয়া দরকার।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print