
প্রভাতী ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আরো এক মুসল্লি মৃত্যুবরণ করেছেন। ওই মুসল্লির নাম আবদুল হান্নান (৫০)। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৮ জনে।
মঙ্গলবার (৮ই সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার ৮৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল।
রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল এসব সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ফতুল্লার তল্লা চামারবাড়ি বাইতুল সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিসের ছিটানো পানি জমার পর সেখান থেকে তিতাস গ্যাস লাইনে লিকেজ পাওয়া যায়।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মসজিদের সামনের গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে।
ঘটনার পর রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে সংকটাপন্ন ৩৭ জনকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৮ মারা গিয়েছে। আইসিইউতে আছেন ৮ জন। আর মাত্র ১জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি গফুর মিয়া জানান, এশার নামাজ পড়ার সময় ২ তলা মসজিদের ৬টি এসি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে মসজিদের জানালার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এবং মসজিদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। স্থানীয় লোকজন দ্রুত মসজিদের ইমাম মাওলানা মালেক নেসারী (৬০) ও মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেনসহ (৫০) প্রায় ৪০ জন মুসল্লিকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন। এরপর তাদের শহরের ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, দগ্ধদের মধ্যে অনেকের মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে ঝলসে যায়। আহতদের অনেকের হাত পা কেটে রক্তাক্ত হয়। মসজিদের ফ্লোর রক্তে ভেসে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় মসজিদে অর্ধশতাধিক লোক নামাজ পড়ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় মসজিদে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসল্লিদের গায়ে আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে। এতে তারা একে একে দগ্ধ হতে থাকেন। মসজিদের ভেতর থেকে আসতে থাকে মুসল্লিদের চিৎকার। পরে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
বিস্ফোরণে মসজিদের থাই গ্লাস উড়ে গেছে। দগ্ধ শরীর নিয়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে অনেকে রাস্তায় গড়াগড়ি দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. ফাহিম জানান, এশার নামাজ পড়ে বের হওয়ার পরপরই মসজিদের ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পাই। প্রায় ৫০-৬০ জন অগ্নিদগ্ধ হন। বিস্ফোরণের পর পোড়াদেহের যন্ত্রণা কমাতে দগ্ধরা মসজিদ থেকে বের হয়ে বাইরের কাঁদা পানিতে গড়াগড়ি করেছেন। হৃদয় বিদারক সেই দৃশ্য দেখে অনেকেই চোখে পানি রাখতে পারেন নি।