বুধবার, ২রা জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বুধবার, ২রা জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বুধবার, ২রা জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

ইফা’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারের স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় জামায়াতপন্থী ও দূর্নীতিবাজ পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫ টি সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ এবং মানববন্ধন হওয়ার পরে তার দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা আরো চরম আকার ধারণ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার-প্রকাশ নেহায়েত পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয় এবং নিজেকে অনেক ক্ষমতাধর বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা। তিনি অফিসের অধীনস্থ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে এই বলে হুমকি দিচ্ছেন যে, যারা তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রদান করে সাংবাদিকদেরকে সংবাদ প্রকাশে সহযোগিতা করতেছেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের জামায়াতপন্থী এই বিতর্কিত পরিচালকের বিরুদ্ধে ১ম পর্বের প্রতিবেদনে বিভিন্ন কর্মস্থলে ভুয়া ভাউচার দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, অধীনস্থ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা, আলেম-ওলামা পীর মশায়েখ ও সরকার দলীয় নেতাদের সাথে দ্বন্দ্ব, জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কেন্দ্রীক দূর্নীতি, ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করা, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলন না করা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। যার কারণে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হচ্ছে।

এবার ২য় পর্বের অনুসন্ধানে এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো বিভিন্ন খাতে অনিয়ম -দূর্নীতির পাশাপাশি
বিভিন্ন লোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে।

জানা যায়, তৌহিদুল আনোয়ারের পিতা ওবায়দুল হক সন্দীপ উপজেলার আল বদর বাহিনির নেতা ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিতেন। তার অত্যাচারে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং মা -বোনেরা দিশাহারা ছিলেন। যুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযুদ্ধাকে নির্যাতন এবং মা- বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন করে হত্যায় পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধাদের অসীম ত্যাগ এবং মা- বোনদের ইজ্জতের বিনিময় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর উক্ত আল বদর বাহিনীর নেতা ওবায়দুল হককে মুক্তিযুদ্ধারা বিতাড়িত করলে তিনি পালিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে সন্দীপ থানায় বেশ কয়েকটি ডাকাতি, চুরির মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়।

এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দূর্নীতি করে সুযোগ পান বলে সবসময় চট্টগ্রামকে বেছে নেন। ২০১৭ সালে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স এর প্রকল্প পরিচালক পদে যোগদান করার পর থেকে দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।তিনি জমিয়াতুল ফালাহর পরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণের পরে প্রায় ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকা দিয়ে আলোক সজ্জার জন্য ঝিনুক বাতি, বিভিন্ন লাইট এবং তারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয় করেন । এসব মালগুলো মসজিদের ইমাম সাহেবের পাশের রুমে গোডাউন করে রেখেছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ও ধর্মীয় মাহফিলগুলোতে মসজিদের আলোকসজ্জায় এগুলো ব্যবহার করে মোটা অংকের ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় অনুষ্ঠানে এসব আলোকসজ্জার কন্টাক্টও নেন তিনি। এসব সাজসজ্জার জন্য তাঁর ৪-৫ জন ডেকোরেশন স্টাফ রয়েছেন। বর্তমানেও উক্ত ব্যবসা অব্যহত আছে। চাকরী বাণিজ্যের নামেও তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।২০২০ সালে প্রতারক তৌহিদুল আনোয়ার যাদের সাথে প্রতারণা করেছেন তাদের ভয়ে এবং তার কুকর্ম ও দুর্নীতি ঢাকতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়িকা আবাসিকের জামায়াত -শিবিরের সাথে যৌথভাবে নির্মিত একতা ভবনের বাসা ছেড়ে পালিয়ে ঢাকা আশকোনা অফিসে বদলি হয়ে যান। পরিস্থিতি শান্ত হলে লবিং করে পুনরায় চট্টগ্রাম অফিসে চলে আসেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহকে ব্যবহার করে চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স এর প্রকল্প পরিচালক পদ থেকে ঢাকা আগারগাঁও হেড অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদে পোষ্টিং এর জন্য জোর তদবির চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে হেড অফিসের সবাইকে অজ্ঞ বলেও মন্তব্য করতে দ্বিধা করেন নি। সবাইকে অযোগ্য বললেও মূলত তার অফিসিয়াল কাজের কোন মনোযোগ ও জ্ঞান নেই। এমনকি একটি সাধারন নোট বা চিঠি লেখার নূন্যতম যোগ্যতাও তার নেই। সেজন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিটি বিভাগে তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হয়। তিনি অফিসে বসে সব সময় অপরের গীবত করেন এবং উর্ধ্বতন অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে গায়েবি চিঠিপত্র লিখেন। তিনি দম্ভের সাথে বলেন, কেমনে অফিস চালাতে হয় সেটা হেড অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুঝে না। আমি হেড অফিসে গিয়ে তাদেরকে অফিস কেমনে চালাতে হয় বুঝিয়ে দিব। সেসময় হেড অফিসে ঢুকতে না পেরে কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে বাকবিতন্ডায়ও জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে ঢাকা আশকোনা বিভাগীয় কার্যালয়ে পরিচালক পদে পোষ্টিং দেওয়া হয় তাকে। সেখানেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাকে আশকোনা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং বর্তমান সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ বিতাড়িত করেন। প্রায় ৮ মাসে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শান্ত হলে তৌহিদুল আনোয়ার সেই সুযোগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসে পোষ্টিং নেওয়ার জন্য জোর তদবীর চালিয়ে সফল হন। পুনরায় চট্টগ্রামে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। অতীতে যেখানে দুইজন পরিচালক দায়িত্ব পালন করেন অর্থাৎ চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ এবং বিভাগীয় অফিস হাজী ক্যাম্প পরিচালনা করতেন সেখানে ঢাকা অফিসের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে একটি পরিচালক এবং অন্যটি অতিরিক্ত পরিচালক পদ দুটি ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। কেননা ২ পদে দায়িত্ব পালন করলে ভালভাবে দুর্নীতি করতে পারবে।

এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেইটে সিঁড়ির পার্শ্বে মসজিদের অংশে একটি চা-দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে ২১ হাজার টাকা, মসজিদের বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিভিন্ন দোকানে অবৈধ লাইন দিয়ে প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা, মসজিদ মার্কেটের ভিতরে মাকের্টের গলিকে মালামাল রাখার জন্য ভাড়া দিয়ে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা, মসজিদের আশপাশের ফুটপাতের প্রতি দোকান থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা করে প্রায় ১০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করেন। একইভাবে জমিয়াতুল ফালাহর উত্তর কর্ণারে সিড়ির পার্শ্বে পান-সিগারেট ও ষ্টেশনারীর দোকান ভাড়া দিয়ে মাসিক ১২ হাজার টাকা, মাঠের ভিতরে ও বাহিরে ভাসমান দোকান থেকে দৈনিক ৫ হাজার টাকা অবৈধ আয় করে পকেট ভারী করতেছেন। এসব দূর্নীতির টাকায় সম্প্রতি মাটিরাঙ্গায় প্রায় ২০ একর জমি ক্রয় করেছেন।

এছাড়া তিনি সন্দীপ হজ্ব কাফেলা ও ট্রাভেল এজেন্সীর পরিচালক বলেও জানা যায়। কোতোয়ালি থানাধীন কবি কাজী নজরুল ইসলাম রোডের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় এই এজেন্সির অফিস রয়েছে। যদিও একজন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা কখনো নিজেকে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারেন না।

তিনি জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মাহফিলে পানির বিল বাবদ ৮-৯ হাজার টাকার ভূয়া ভাউচার দাখিল করেও টাকা আত্মসাৎ করেন। যদিও জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের মুসল্লিদের অজুখানার ওয়াসার পানির বিল বেশি আসার কারণে নগর পিতা সাবেক সফল মেয়র মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধূরী মসজিদ ও মুসল্লিদের স্বার্থে তৎক্ষনাৎ নামমাত্র মাসে ৬০০ টাকা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করেন। সুতরাং যত পানি ব্যবহার হউক না কেন বিল দিতে হবে শুধুমাত্র ৬০০ টাকা।

একটি সূত্র জানায়, তৌহিদুল আনোয়ার প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তার আগে যুদ্ধ অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে ইসলামের ভুল ব্যাখা দানকারী, বাংলার ইহুদী ও মুসলমানদের পথভ্রষ্টকারী হিসেবে খ্যাত দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ওয়াজ শুনেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিসে এসে প্রথমে বসে দেলোয়ার হোসেন সাইদী পরে মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ শুনে অফিসের কাজকর্ম শুরু করেন।

নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের হল রুমে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তৌহিদুল আনোয়ার মুসলিম লীগকে হাই-লাইট করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামীলিগের সহ সভাপতি ও তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব খোরশেদুল আলম সুজন তার বক্তব্যের মধ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে তৌহিদুল আনোয়ারের এমন স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দিয়েছিলেন। এসময় তৌহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলা করার কথাও বলেন তিনি ।

তৌহিদুল আনোয়ারের গ্রামের বাড়ীর একটি সূত্র জানায়, তাঁর জন্ম হয় ১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর এক বৃদ্ধাশ্রমে। লোকজন জানায়, তাঁর পিতা-মাতার মধ্যে সবসময় কলহ লেগে থাকতো। কলহের জেরে তাঁর জন্মের প্রায় দেড় বছর পূর্বে তাঁর পিতা বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে ফিরে আসে তাঁর জন্মের প্রায় ৩ মাস পরে। তাই তৌহিদের পিতৃ পরিচয় নিয়ে আবার পারিবারিক কলহ লেগে যায়। এলাকাবাসীর মধ্যেও সেটা নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তাঁর পিতা নাকি তাঁর মাকে প্রায় সময় বলতেন তৌহিদ যেন পিতার নাম ওবায়দুল হক না লিখে।

অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা জীবনে তৌহিদুল আনোয়ারের স্বভাব চরিত্র মোটেও ভাল ছিলোনা, পরকীয়া প্রেমে আসক্ত ছিলেন । পরকীয়ার সূত্রে তিনি পুরান ঢাকার আরমানি টোলার বাসিন্দা আল আমিনের সুন্দরী স্ত্রীকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নগদ ১০ লক্ষ টাকাসহ ভাগিয়ে এনে বিয়ে করেন। বর্তমানে সেই মহিলার সাথে সংসার করতেছেন। আরো জানা যায় যে, তিনি তার শালিকাকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার কারনে শ্বশুর বাড়ীতেও যেতে পারেন না।তিনি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকতাকে ব্ল্যাক মেইলিং করতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ফাইল চুরি করে জামায়াতের আদর্শিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করান বলেও জানা যায়।

শুধু আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ ও জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কেন্দ্রীক দূর্নীতি নয় তিনি আমেরিকা ও ইউরোপে তাঁর ভাই-বোন রয়েছে তাই সেখানে সিটিজেনশিপ নিয়ে দেওয়া এবং সরকারী চাকরি প্রদানের নামেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই কারণে তৌহিদুল আনোয়াকে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা বিভাগের মানুষেরা প্রতারনার মহা নায়ক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক মনের মত চাকরী না পেয়ে হতাশ হয়ে এদিক ওদিক লবিং তদবির করে বেড়াচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোন শিক্ষিত বেকার যুবকের সাথে পরিচয় হলে তৌহিদুল আনোয়ার ধর্মের দোহাই দিয়ে এবং চাপাবাজি করে বলেন, তাঁর সাথে মন্ত্রী, এমপি, সচিব, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সাথে খুব গভীর সর্ম্পক আছে। এই সুযোগে নিরীহ বেকার যুবকরা আশায় বুক বেঁধে তাঁর কাছে ধরা দেয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সরকারি, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিবে বলে প্রতারনা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনে ফিল্ড সুপারভাইজারের চাকরী দিবে বলে হাটহাজারী থানাধীন রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে ৬ লক্ষ টাকার প্রস্তাব দেয়। পরে দর কষাকষি করে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় মৌখিক চুক্তি হয়। তাকে প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মাষ্টার রোলে পরে জাতীয় করন করবে বলে জানায়। সে নগদে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। প্রায় ৫ মাস ধরে চাকরী না পেয়ে সেই যুবক রফিক তার পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোন ডকুমেন্টস না থাকায় আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তৌহিদুল আনোয়ার তাকে এই বলে হুমকি দেয় যে, তাঁর বড় ভাই খুরশেদুল আনোয়ারের ছেলে দিনাজপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী, বেশী বাড়াবাড়ি করলে মামলায় ফাঁসিয়ে জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পটিয়া থানার জিরির বাসিন্দা আবদুল করিমকে হজ্ব লাইসেন্স করে দিবে বলে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া তিনি সরকারী বেসরকারীভাবে হজ্বে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অনেক জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি বিভাগের দারুল আরকান মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং মডেল কেয়ার টেকার, সাধারন কেয়ার টেকার, কেন্দ্রের শিক্ষক -শিক্ষিকা নিয়োগ দিবে বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। তারা টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকেও রফিকের মত মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

এছাড়া জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের ইমামসহ কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে সরকারী রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করে দিবেন বলে জনপ্রতি প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন। তাদেরকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে না পেরে একজন কর্মকতাকে বাদী করে সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রীট করিয়ে দেন।

সরকার জাতীয় মসজিদে রমজানের সময়ে তারাবীহ নামাজের হাফেজদের জন্য সরকারি ভাবে ইফা প্রধান কার্যালয় থেকে যথোপযুক্ত সম্মানী বরাদ্দ করেন। কিন্তু পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার অন্যান্য সাধারণ মসজিদের মত হাফেজ ইমামদের সম্মানির কথা বলে ২৭ রমজানে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেন। মুসল্লি পরিষদের সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ -সভাপতি জনাব আলহাজ্ব বদিউল আলম প্রতিবাদ করলেও পরিচালক তাহা ক্ষমতার জোরে কর্ণপাত করেন নি। জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে পবিত্র মাহে রমজানের সময় মুসল্লিদের ইফতারের জন্য সরকারীভাবে কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন। কিন্তু চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধনী ব্যবসায়ীরা ঐ জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ট্রাকে ট্রাকে ইফতার সামগ্রী প্রদান করে পুরা মাসে হাজার হাজার মুসল্লিদের ইফতারের আয়োজন করেন। পবিত্র মাহে রমজান মাসে শেষের দিকে ধনী ব্যবসায়ীদের দানকৃত অবশিষ্ট ইফতার সামগ্রী বিক্রি করেও কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি । সাধারন মুসল্লি ও ধনী ব্যক্তিরা জানে না যে, সরকার ইফতারের জন্য টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কারন উহা গোপন করে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন তৌহিদ।

জানা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করলেও নিজ এলাকা সন্দীপের স্থানীয় এমপির সাথে তার বিরোধ দীর্ঘদিনের।

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিচালকের অধীনস্থ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সামনে তাঁকে সম্মান করলেও পেছনে ঠিকই তাঁর কঠোর সমালোচনা করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, চাকরী বাঁচানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারিনা আমরা । তাঁর বিরুদ্ধে দূর্নীতি তদন্তে প্রধান কার্যালয় থেকে টিম এসেছে আমরা মুখ খুলতে পারিনি। যার বিরুদ্ধে তদন্ত তাঁকে স্বপদে বহাল রেখে কখনো নিখুঁত তদন্ত সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা। এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালকের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য যে, এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানোর জন্য সম্প্রতি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অসহায় ও নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় , ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, সচিবালয়, আইজিপি, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন পাঠিয়েছেন।

সূত্র : অনলাইন নিউজ পোর্টাল বি প্লাস

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print