Search

বৃহস্পতিবার, ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

বাঁশখালীর কালীপুরে আদালতের রায় অমান্য করে বাদীকে উচ্ছেদ পূর্বক বিরোধীয় সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন ৫নং কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল কোকদন্ডী এলাকায় মামলা চলমান অবস্থায় আদালতের রায় অমান্য করে মামলার বাদীপক্ষকে উচ্ছেদ করে বিরোধীয় সম্পত্তিতে প্রতিপক্ষ কর্তৃক পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মামলাসূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী থানাধীন কালীপুর এলাকার জঙ্গল কোকদন্ডী মৌজার আর.এস ৭৯ নং খতিয়ানের ৪৬২ নং দাগের এবং বি.এস ৫০ নং খতিয়ানের ৫৪৬ নং দাগের ১ কানি ১৮ গন্ডা বা ৭৬ শতক জমিতে ১৯৪০ সাল থেকে পূর্ববর্তীক্রমে একটানা ভোগদখল করে আসিতেছিলেন বাদীপক্ষ অর্থাৎ আহমদ ছফা, আহমদ নবী, মোহাম্মদ হোসেন, ছেনু আরা বেগম, মোহাম্মদ ছিদ্দিক এবং মোহাম্মদ হাছান। কিন্তু বিবাদীপক্ষ মো: কাশেম এবং মমতাজ বেগম গং হঠাৎ করে তাদেরকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করলে আহমদ ছফা গং ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ স্বত্ত্ব দাবী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। যেহেতু ১৯৪০-২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭৯ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভোগ দখল করায় বাদীপক্ষের স্বত্তের উদ্ভব হয়েছে। কারণ সরকারী খাস জমিতে টানা ৬০ বছর ভোগ দখলে থাকলে উক্ত জমি স্বত্ত্ব দাবীর সুযোগ রয়েছে। দীর্ঘ ২ বছর পর ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মামলার রায় হয়। কিন্তু রায়ে বিচারক ভুলবশত বাদীপক্ষের স্বত্ত্ব ভোগদখল সময়কালকে ৭৯ বছরের স্থলে ৫৯ বছর উল্লেখ করায় রায় বিবাদীর পক্ষে যায়। বাদীপক্ষ ১১ই মার্চ রায় রিভিউ করার আবেদন করেন। আদালত উক্ত রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করে পূর্বের রায় স্থগিত করেন। ২৭ জুন আদালত ভুল সংশোধন করে বিরোধীয় জমিতে বাদীপক্ষের ৭৯ বছর ভোগদখল বিবেচনা করে উক্ত ১ কানি ১৮ গন্ডা জমিকে বাদীপক্ষের স্বত্ত্ব ঘোষণা করেন।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিরোধীয় ১ কানি ১৮ গন্ডা জমির মধ্যে প্রায় ১ কানি জমিতে বাদীপক্ষের ঘরবাড়ী রয়েছে। বাকী প্রায় ১৮ গন্ডা জমিতে তারের ঘেরা দিয়ে সেখানে জোরপূর্বক ১টি টিনের গৃহ, ১টি ১তলা পাকা গৃহ এবং বড় ১টি মুরগীর ফার্মের জন্য টিনের শেড নির্মাণ করেছেন বিবাদীপক্ষ। যেখানে পূর্বে বাদীপক্ষের ঘর ও ফলের বাগান ছিল। বিবাদীপক্ষের লোকেরা কোন গাছ কাটেন নি বলে দাবী করলেও সেখানে ৬০-৭০ বছরের পুরাতন গাছের কাটা গোড়া এবং একটু দূরে কাটা গাছগুলো দেখা যায়। তারের ঘেরা দেওয়া বিবাদীদের দখলে নেওয়া বাদীপক্ষের লোকের যেই ১টি ঝুপড়ি ঘর রয়েছে সেই ঘরের মিটার থেকে বিবাদী পক্ষের লোকেরা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ লাইন ব্যবহার করার অভিযোগের সত্যতা ও পাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উক্ত বিরোধীয় জমিতে বাদী অর্থাৎ আহমদ ছফাদের পূর্ব পুরুষরা বসবাস করে আসিতেছিল ১৯৪০ সাল থেকে। এই জায়গায় তারা ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং বিভিন্ন ফলের বাগান করেছিল। কিন্তু ২ বছর আগে হঠাৎ করে কাশেম তাদেরকে উচ্ছেদ করতে চাইলে তারা আদালতে মামলা করেন। মামলার রায় প্রথম বার কাশেমদের পক্ষে গেলেও ২য় বার আহমদ ছফাদের পক্ষে আসে। কিন্তু রায় না পেয়েও মো: কাশেম ও তার ছেলেরা বিরোধীয় অর্ধেক জমির গাছপালা কেটে দখলে নিয়ে সেখানে পাকা ঘর ও মুরগির ফার্ম করেছেন। স্থানীয়রা বলেন, আদালতের প্রতি ন্যুন্যতম সম্মানবোধ থাকলেও কেউ এমন কাজ করতে পারে না। তারা সবসময় গায়ের জোরে চলতে চায়।

মামলার বাদী আহমদ ছফার ছেলে দিদার বলেন, আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মো: কাশেম গং যখন আমাদেরকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলো তখন অর্থাৎ ২০১৯ সালে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হই। ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মামলার রায় তাদের পক্ষে গেলে আমরা রায় রিভিউ করার আবেদন করি।গত ২৭ জুন রিভিউ রায় আমাদের পক্ষে আসে। রায় আমাদের পক্ষে আসায় বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের দাবীকৃত ১ কানি ১৮ গন্ডা জায়গা থেকে ১৮ গন্ডা দখলে নিয়ে তারের বেড়া দিয়ে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। আদালত বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে আমরা কোন প্রকার মামলা করার সুযোগ পাইনি। মো: কাশেম আদালতে জেরায় বলেছিলেন ১৮ গন্ডার প্লটে তাদের ২টি গৃহ রয়েছে, যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। তাই উক্ত জমিতে তাদের দখল দেখাতে আমাদের বাগানের গাছপালা কেটে জোরপূর্বক ২টি গৃহ নির্মাণ করেছেন। আপীলের রায় তাদের পক্ষ নিতে এই ঘৃণ্যতম অপচেষ্টা। কিন্তু তাদের এসব জঘন্য কর্মকান্ড সম্পর্কে এলাকাবাসী অবগত। তাই আমাদের আশা এবং বিশ্বাস আপীলের রায়ও আমাদের পক্ষে আসবে।

বাদীপক্ষের মো: সিদ্দিকের মেয়ে হামিদা বলেন, বিবাদীপক্ষ চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয় হওয়ায় আমরা কখনো ন্যায় বিচার পাইনি। মামলা করার পরেও বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়ে যখন বারবার ঝামেলা হচ্ছিল তখন আমরা চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেছিলাম মামলার আওতাধীন অর্থাৎ বিরোধীয় ১ কানি ১৮ গন্ডা জমি চৌহদ্দি অনুযায়ী খুঁটি দিয়ে চিহ্নিত করে দিতে। আদালতের রায় যাদের পক্ষে যায় তারা জমি ভোগ দখল করবে। কিন্তু তিনি বলেছিলেন আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় জমি চিহ্নিত করা দূরের কথা ১ মিটার জমি মাপারও সুযোগ নেই। রায় আমাদের পক্ষে এলে জমির দখল তিনি নিজেই বুঝিয়ে দিবেন। কিন্তু মামলার রিভিউতে যখন রায় আমাদের পক্ষে আসলো তখন বিবাদীরা অর্থাৎ কাশেম গং ২০০-২৫০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের বাগানের ফলজ গাছপালা কেটে আমীন জসীমকে দিয়ে মেপে ১৮ গন্ডা জমি দখল করে সেখানে পাকা ঘর এবং বিশাল ফার্ম কিভাবে স্থাপন করলো? তখন চেয়ারম্যান সাহেব কেন নীরব ছিলেন? হামিদা অভিযোগ করে আরো বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমাদেরকে বলেছেন নিন্ম স্তরের লোকের জন্য কাজ করতে তিনি পছন্দ করেন না। তাহলে তিনি কি শুধুমাত্র উঁচু স্তরের লোকের ভোটে নির্বাচিত?আদালতের রায় ডিক্রিপ্রাপ্ত বিবাদীদের দখলকৃত উক্ত ১৮ গন্ডা জমি উদ্ধারের জন্য তিনি স্থানীয় প্রশাসন, ভূমিমন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।

আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় জমি মাপা প্রসঙ্গে সার্ভেয়ার জসীমের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা চলমান সেটা আমি জানতাম না। মামলার কথা কেউ বললে আমি উক্ত জমি পরিমাপ করতাম না।

বিবাদী পক্ষের মো: কাশেম রিভিউ রায়ের পর গৃহ নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ৪ মাস আগে আমরা যখন রায় পেয়েছিলাম তখন এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছিলাম। রিভিউ রায় আমাদের বিপক্ষে যাওয়ার পরে আর কাজ করিনি। এখন আমরা উক্ত রিভিউ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেছি। আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ করবো না।

বিবাদী পক্ষের কাশেমের ছেলে মনি উত্তেজিত হয়ে বলেন কিসের আদালতের রায়, আমরা কোন রায় বুঝি না। এসব জমি আমাদের, এখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সংবাদ সংগ্রহের সময় উশৃংখল মনি তার ভাইদের নিয়ে বিবাদী পক্ষের লোকজনের উপর তেড়ে গিয়ে মারমুখী আচরণও করে।

৫ নং কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট আ.ন.ম শাহাদাত আলম বলেন, বাদী এবং বিবাদী উভয় পক্ষ আমার প্রতিবেশী। আমি সবার প্রতি খুবই আন্তরিক। কিন্তু বিরোধীয় সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকার কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাদীপক্ষ রিভিউ রায় পেলেও বিবাদীপক্ষ আপীল করায় রিভিউ রায় স্থগিত হয়ে যায়। রিভিউ রায় বাদীপক্ষ পাওয়ার পরেও বিবাদী পক্ষের জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উক্ত প্লটে বিবাদীপক্ষের ৩ কানির বেশী জমি রয়েছে। সুতরাং সর্বশেষ রায় যদি বাদীর পক্ষে যায় তাহলে ১ কানি ১৮ গন্ডা জমি বুঝিয়ে দিতে সমস্যা হবে না। বিরোধীয় জমির কোন অংশে স্থাপনা নির্মাণের কোন সুযোগ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, আর কোন প্রকার কাজ না করতে আমি নিষেধ করবো।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print