
প্রভাতী ডেস্ক : হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁর দাবি করা দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। শুক্রবার(৩০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন তিনি। সোনারগাঁ থানা পুলিশ সূত্র জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে, মামলার নম্বর ৩০।
মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও মামলায় জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘুরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে যান।’
মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জান্নাত বলেন, ‘২০০৫ সালে তাঁর স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে–শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুলের কারণে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামনুলের পরামর্শে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।’
অভিযোগে জান্নাত বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর আমি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তাঁর অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তাঁর প্রলোভনে পা দিই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পার্লারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’
জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, ‘৩রা এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘুরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।
জান্নাত বলেন, পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দূরাবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকের উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’
উল্লেখ্য, জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে গত ২৪শে এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের সহায়তায় চেয়ে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন তিনি। পরদিন মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ঝর্নাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। ঝর্না উদ্ধার হওয়ার ৩ দিনের মাথায় এই মামলা করলেন।
উল্লেখ্য, মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে রাজধানী ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেপরোয়া তাণ্ডবের পর রিসোর্টকাণ্ডে মামুনুল হককে নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাণ্ডবের অভিযোগে একে একে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মাওলানা মামুনুল হককে গত ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০২০ সালে দায়ের হওয়া মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পল্টন ও মতিঝিল থানার পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। ওই দুই মামলাতে আবার তাকে মোট ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবি।